অবশেষে বৃদ্ধ ভিখারি মায়ের স্কুলশিক্ষিকা কন্যা যা বললেন !

তিন পুলিশ কর্মকর্তা ছেলে, এক স্কুল শিক্ষিকা মেয়ের রত্নাগর্ভা অথচ ভিক্ষুক মা মনোয়ারা বেগমের পাশে দাঁড়ালেন বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম বিপিএম।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় মনোয়ারা বেগমকে দেখতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হন এসপি। এ সময় অসহায় চিকিৎসাধীন মায়ের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে তার দুর্ভোগ আর করুণ আর্তনাদের কথা শোনেন।

তিন পুলিশ কর্মকর্তার অবেহলার শিকার সেই মায়ের অসহায়ত্বের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হন এসপি। পরে তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি তার চিকিৎসার জন্য নগদ দশ হাজার টাকাও প্রদান করেন।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের তিন ছেলেই পুলিশের কর্মকর্তা। আরেক ছেলে ব্যবসায়ী। একমাত্র মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তারপরেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হতভাগ্য মা মনোয়ারাকে ভিক্ষা করে জীবন চালাতে হয়। গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের শয্যার পাশে দাঁড়ালেন বরিশালের এসপি। অসহায় মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে এসপি তার এই অবস্থার কারণে স্বাবলম্বী সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোল্লা আজাদ হোসেন।

এছাড়া বৃদ্ধ মাকে অবহেলার কারণে আরেক সন্তান মেয়ে বাবুগঞ্জের পূর্ব ভুতেরদীয় নবারুন সরকাররি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম সুলতানাকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার কেএম তোফাজ্জল হোসেন সোমবার তাকে এই বিষয়ে শোকজ করেছেন।

এ অবস্থায় স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুলের বেতন ব্যতীত তার আর কোন ইনকাম নেই। ফলে স্বামীর সংসারে বসে তিনি বৃদ্ধ মায়ের তেমন একটা খরচ বহন করতে পারছেন না।

যদিও এই শিক্ষিকা এর আগে গত শনিবার তার মাকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন- নিজের সংসার পরিচালনা করে আর সময় হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ মায়ের খোঁজখবর নিতে পারেননি।

একজন মানুষ গড়ার কারিগরের মুখে এমন কথা শুনে খোদ পুলিশ প্রশাসনকেও হতবাক করেছিলো। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে ওই শিক্ষিকার বেতন ২০ হাজারের ওপরে।

ফলে এই বিষয়টি স্থানীয় সংসদ অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতানকে খুব বেশি মর্মাহত করেছে। যে কারণে তিনি পুলিশের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজেই সার্বিক দায়ভার নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়াও অনেকে রাজনীতিবীদ, সমাজসেবক ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই বৃদ্ধ নারীর দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ওই বৃদ্ধ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী।

আইয়ুব আলী কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও নানা অভাব অনাটনের সংসারে ছয় সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে তাদের।

আইয়ুব আলী-মনোয়ারা দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে- ফারুক হোসেন, নেছার এবং জসীম উদ্দিন পুলিশে কর্মরত রয়েছেন। মেয়ে মরিয়ম সুলতানা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। অন্য দুই সন্তান শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন নিজের ব্যবহৃত ইজিবাইক ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বয়সের ভারে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারছিলেন না।

গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে ভিক্ষা করতে যেয়ে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে বাবুগঞ্জের স্টিল ব্রিজের পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে ছিলেন।”