একই শিকলে বাবা-ছেলেকে গাছে বেঁধে দিনভর নির্যাতন (ভিডিও)

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় চুরির অপবাদে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এ ঘটনার পর শিশুটির বাবা খোকন মোল্লাকেও ধরে নিয়ে একই শিকলে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

পরে সন্ধ্যায় খবর পেয়ে সন্তোষপুর ফাঁড়ির পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে নির্যাতিত শিশু ও তার বাবা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ দিনেও কোনো মামলা হয়নি।

নির্যাতিতরা হলেন, উপজেলার উত্তর চন্দ্রপুর গ্রামের খোকন মোল্যা ও তার ছেলে চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শামীম (১১)।

অভিযুক্তরা হলেন, ওই গ্রামের প্রভাবশালী হালিম বেপারী, করম আলি বেপারী, সাহেব আলী বেপারী

গেল ৯ মে সকালে উপজেলার উত্তর চন্দ্রপুর এলাকায় মোল্লাবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে পালং মডেল থানার ওসি বলছেন, এ ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না। কেউ তাকে জানায়নি। অন্যদিকে সন্তোষপুর ফাঁড়ির পুলিশ বলেছে, ঘটনার দিন পালং মডেল থানার ওসিকে জানানো হয়েছে।

নির্যাতিত শিশুর মা ফাহিমা ও স্থানীয় মেম্বার রুবেল মৃধা জানান, সদর উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের হালিম বেপারীর বাড়িতে শবেবরাত দিবাগত রাতে চুরি হয়। গত ৯ মে সকালে খোকন মোল্যার ছেলে শামীম (১১) জড়িত সন্দেহে ধরে নিয়ে হালিম মোল্যার বাড়ির কাঁঠাল গাছের সঙ্গে কোমরে লোহার শিকল লাগিয়ে গামছা দিয়ে হাত পিছমোড়া বেঁধে লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট করেছে।

এর কিছুক্ষণ পর ওই বাড়ির সামনে দিয়ে শিশু শামীমের বাবা খোকন মোল্যা ভ্যান চালিয়ে আসার সময় তাকেও ধরে নিয়ে একই শিকলে বেঁধে বেদম মারপিট করে প্রভাবশালী হালিম বেপারী, করম আলি বেপারী, সাহেব আলী বেপারী।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলে এ নির্যাতন। খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় সন্তোষপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশু ও তার বাবাকে উদ্ধার করে। এ সময় ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ নির্যাতিতদেরকে পালং মডেল থানায় মামলা করার পরামর্শ দেয়।

পরদিন ১০ মে সকালে আহতদের অবস্থার অবনতি হলে গুরুতর আহত শামীম ও তার বাবাকে স্থানীয়রা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনার পর নির্যাতিত পরিবার সন্তোষপুর পুলিশ ফাঁড়িতে দরখাস্ত দিলেও ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি সালিশ মীমাংসার কথা

বলে কালক্ষেপণ করেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।

ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলে ও কোনো মামলা নেয়নি পুলিশ। অসহায় গরিব পরিবার কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হন।

এদিকে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নির্যাতিত পরিবারটি প্রভাবশালীদের ভয়ে কোনো মামলা করতে সাহস পায়নি। বর্তমানে তারা হাসপাতালে আতংকে মধ্যে আছে।
নির্যাতিত খোকন মোল্যা বলেন, আমার শিশু শামীমকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে লোহার শিকল দিয়ে ও গামছা দিয়ে হাত গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারপিট করেছে। আমি ওই বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে ও ধরে নিয়ে হালিম বেপারী ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে বেঁধে মারপিট করেছে। আমি অসহায়। প্রভাবশালীদের ভয়ে মামলা করতে পারছি না।

ঘটনার সততা স্বীকার করে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. লালু মিয়া খা, রিপন শিকদার,রুবেল মৃধা বলেন, প্রভাবশালীরা পুলিশের সহযোগিতায় ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এ নিষ্ঠুর ও নির্মম নির্যাতনের বিচার চাই আমরা।

সন্তোষপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, আমি ঘটনা শোনার পরে এ শিশু ও তার বাবাকে উদ্ধার করে পালং মডেল থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পালং মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানকে অবহিত করেছি।

এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের কাছে আজই জানলাম। এর আগে এ ঘটনা কেউ আমাকে জানায়নি। যদি পুলিশ পরিদর্শক আমাকে বলে থাকে তা আমার খেয়াল নেই।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল মোমেন বলেন, এ বিষয়টি আমি আপনাদের কাছেই শোনলাম। বিষয়টি আমি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।