এক সপ্তাহ আগে মেসে ওঠেন তিন ‘জঙ্গি’

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ তিনজনের লাশ রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এই তিনজন মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভাড়া নিয়ে ভবনটিতে উঠেছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ১৩/১ পশ্চিম নাখালপাড়ার ‘রুবি ভিলা’ নামে বাড়িটি ঘিরে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে কয়েক দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

পশ্চিম নাখালপাড়ার যে ছয়তলা বাড়িটি ঘিরে এ অভিযান চলছে, সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এই ভবনটি ছাপড়া মসজিদের পাশে। ভবনের উত্তর দিকে রয়েছে সংসদ সদস্যদের আবাসিক ভবন। বাড়িটির পাঁচতলায় একটি মেস করে জঙ্গিরা অবস্থান করছিল বলে র‍্যাব প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। ওই ভবনে বেশ কিছু ছাত্র মেস করে থাকেন।

আজ শুক্রবার সকালে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘ভবনে তিনজনের লাশ রয়েছে। এর মধ্যে জাহিদ ও সজীব নামের দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তবে দুটির ছবি একই ব্যক্তির। পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুজনই একই ব্যক্তি। এটা নকল হতে পারে। এই পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। পরিচয় এখানো জানা যায়নি।’

‘জানুয়ারির ৪ তারিখ তারা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে উঠেছিল। ব্যাপার হলো, বাড়ির মালিক এটা জানেনই না। মেস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন রুবেল। সে-ই মূলত মেস মেম্বারদের ঢোকাত, বের করত। দায় ছিল রুবেলের। বাড়িওয়ালা খোঁজ নিয়ে দেখেনি, রুবেল কাকে ঢোকাচ্ছে, কাকে বের করছে। জিজ্ঞাসাবাদে এতটুকু পাওয়া গেছে।’

বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে কাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, সেটি সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেন বেনজীর।

ভবনটিতে র‍্যাবের বম্ব ডিসপোজল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, ফরেনসিক ইউনিট ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। বাড়ির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে সকালে র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, এখানে কয়েকজন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় কয়েকজন জঙ্গি অবস্থান করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাত ২টা থেকে আসলে আমাদের এই অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের শুরুতে, যেহেতু এই ভবনটি নিচতলায় খুব সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল, তাই আমাদের ফটক খোলার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।’

‘কিন্তু সেটি কেউ না খোলায় ফটকটি ভাঙা হয়েছে। পরে আমরা নিশ্চিত হই যে, ভবনের পাঁচতলার একটি কক্ষে জঙ্গিরা আছেন। এরপরই অভিযান পরিচালনা করা হয়। জঙ্গিরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, সেখানে গোলাগুলি করে। এতে একাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা দেখতে পেয়েছি।’

র‍্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন, এসব জায়গায় বোমা, গ্রেনেড বিস্ফোরণের ফলে সেটি আর নিরাপদ থাকে না। সেখানে কিছু কাজ করতে হয়। এরই মধ্যে আমাদের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে পৌঁছেছে। এখন আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজগুলো করব। কাজগুলো শেষ হওয়ার পরই আমরা জাতে পারব, ওখানে কতজন মারা গেছেন।’

মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘এর মাঝে যেহেতু একটি ছয়তলা ভবন ছিল, প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যান্য বাসিন্দা যারা ছিল, তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগে যেমন মিরপুরে যখন অভিযান চালানো হয়েছিল, তখন বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। সেই কারণে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে আলাদা জায়গায় রাখা হয়েছে।’

‘আমাদের এখানে কেয়ারটেকারসহ কয়েকজন আছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে আরো তথ্য আমরা আশা করছি। বিশেষত যারা মারা গেছে, তাদের পরিচয় হয়তো জানা যাবে’, যোগ করেন র‍্যাব কর্মকর্তা।

অভিযানের সময় দুই র‍্যাব সদস্য আহত হয়েছেন, একজনের স্প্লিন্টার লেগেছে, আরেকজন সামান্য আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুফতি মাহমুদ।