ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে দেশীয় গ্যাসের মজুদ

ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে দেশীয় গ্যাসের মজুদ। আর জ্বালানি সংকট কাটাতে অভ্যন্তরীণ তেল-গ্যাস-কয়লা উত্তোলনে জোর না দিয়ে সরকারি পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাচ্ছে আমদানি নির্ভরতা। অন্যদিকে এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও প্রকট। সব মিলিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ব্রিটিশ কোম্পানি কোম্পানি শেলের কাছ থেকে মাত্র সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে বৃহৎ ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। এখনো দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের যোগান দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কেনা ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলো। সে কারণেই দিনটিকে পালন করা হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে।

যদিও বর্তমানের আমদানি নির্ভর নীতিকে জ্বালানি নিরাপত্তার পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাব’র জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সে সময় মূল উদ্দেশ্য ছিল কম খরচে জ্বালানি সরবরাহ করা। এখন সেই অবস্থানে নেই সরকার।

বর্তমানে দেশে মজুদ থাকা প্রায় ১২ টিসিএফ গ্যাস ফুরিয়ে যেতে পারে এক দশকের মধ্যে। এমন অবস্থায়ও অভ্যন্তরীণ জ্বালানি অনুসন্ধানে নেই কাঙ্ক্ষিত গতি। সমুদ্রসীমা জয়ের অর্ধযুগ পরও তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি আটকে আছে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

এ অবস্থায় সংকটের সমাধান খোঁজা হচ্ছে উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানিতে। সরকারের মহাপরিকল্পনা বলছে, ২০৩০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯০ শতাংশ জ্বালানিই হবে আমদানি নির্ভর। ফলে অর্থনীতিতে চাপ বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান চালাতে হবে। আমরা তিন বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করি। এই তেলের দাম একটু ওঠা-নামা করলেই আমাদের মুদ্রার দর পরিবর্তন হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের অর্থনীতি ভালো হচ্ছে। আমরা যদি লাভ করতে পারি তবে আমদানি করতে হবে।

অন্যদিকে, অদক্ষতা আর অনিয়মও জ্বালানি খাতকে অনিরাপদ করে তুলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাজ নোঙ্গর করার সাড়ে ৩ মাসেও জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত না হওয়া, কিংবা বড়পুকুরিয়ার কয়লা আর মধ্যপাড়ার পাথর কেলেঙ্কারি যার সাম্প্রতিক নজির।

এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাস-কয়লা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে। পাথরের ক্ষেত্রে হচ্ছে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে হচ্ছে, এগুলো জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করে না।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে পেট্রোবাংলা আর বাপেক্সের স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শও বিশেষজ্ঞদের।