নানগাওয়ার যাত্রা শুরু: জিম্বাবুইয়ানদের ভাগ্য কি বদলাবে?

জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে কয়েক ঘণ্টা পরই এক সমাবেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন ৭৩ বছর বয়সী এমারসন নানগাওয়া। সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের আমলে জিম্বাবুয়েতে লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হ্রাসে তার ভূমিকা হবে, সেটা শুনতে হাজারো মানুষ সমাবেশস্থলে পৌছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মুগাবের দীর্ঘ্ ৩৭ বছরের শাসনামলে জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ জমেছে। বিশেষ করে দারিদ্র্যতার হার সেখানে ৬০ শতাংশেরও উপরে উঠায় সেখানকার নাগরিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেকারত্বে ভোগছে । কর্মসংস্থান সৃষ্টি থমকে আছে। এমন অবস্থায় জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের প্রধান চাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানগাওয়া কি ভূমিকা রাখবে, তাই দেখার বিষয়।

এছাড়া দীর্ঘ ৩৭ বছরে জিম্বাবুয়েতে একনায়কতন্ত্র পাকাপোক্তভাবে গেঁড়ে বসেছিল, যা নাগরিকদের অন্যতম ক্ষোভের কারণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদল ও সচেতন মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও মুগাবের দমননীতির কারণে তা এতদিন আলোর মুখ দেখতে পারেনি। তবে সেনা হস্তক্ষেপের পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে বিরোধীদলসহ গণতন্ত্রকামী সকল গোষ্ঠী। এদিকে গণতন্ত্র উদ্ধারে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন নানগাওয়া।

এদিকে নানগাওয়া মুগাবে নীতি থেকে সরে আসবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নানগাওয়া ৫০ বছর ধরে মুগাবের আস্থাভাজন হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, নানগাওয়াকে মুগাবের ডান হাত বা কমরেড বলে সম্বোধন করে থাকেন জিম্বাবুইয়েনরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুগাবের কমরেড হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শক্তিধর এই নেতা। মুগাবের দমননীতিতে তার অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভ দমনে জনতার উপর অত্যাচার করারও হুকুম দিয়েছেন এই নানগাওয়া।

নানগাওয়া ও মুগাবের আচরণ কাছাকাছি হলেও বেশ কয়েকটি কারণে আশার আলো দেখছেন জিম্বাবুইয়েনরা। নানগাওয়াকে তুলনামূলক তরুণ হিসেবে দেখছেন তারা। তার বয়স ৭০ নাকি ৭৫ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বয়স যাই হোক মুগাবের মতো একগুয়ে স্বভাবের নন নানগাওয়া। তিনি জনতার কথা কিছুটা হলেও ভাবতে পারেন, এমন ধারণা রয়েছে তাদের মধ্যে।

এদিকে লক্ষ অর্জনে তিনি কঠোর থাকতে পারেন, তার আচরণগুলি এমনই দাবি করছে। আগামী বছরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নানগাওয়া বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার কঠোর দমননীতি-ই জিম্বাবুইয়েনদের চিন্তার কারণ। ইতোমধ্যে তিনি নিষ্ঠুর ও বর্বর হিসেবে পরিচয় লাভ করেছেন।

১৯৮৩-৮৪ সালে জিম্বাবুয়ের মাতাবিলিল্যান্ড গণহত্যার সময় তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় জিম্বাবুয়ের ন্যাশনাল আর্মি কমপক্ষে ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক হত্যা করে। এরপরই কসাই নানগাওয়া হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।

এছাড়া, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর বিরোধী দলের উপর নজিরবিহীন হামলার জন্য তাকে দায়ী করছে জিম্বাবুয়ের একটি মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনটির দাবি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জানু পিএফ পার্টি নির্বাচনে জয়ী হলে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে বিরোধী দলগুলো। তখন আন্দোলন দমাতে সব ধরণের পন্থা অবলম্বন করেন এই শাসক।

নানগাওয়ার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না সাধারণ নাগরিকরা। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে অন্যদিকে বাস্তববাদী হিসেবে জানেন তারা। মুগাবে অপরিণামদর্শী হলেও তিনি তা নন, এমনটাই ধারণা তাদের।

তবে আশার কথা হলো, তিনি ইতোমধ্যে দেশটির বিরোধীদলীয় প্রধান স্ভানজিরাই এর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। মনে হচ্ছে, বর্তমান অবস্থা সামলে উঠতে বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই তিনি কাজ করবেন।

অর্থনৈতিক সক্ষমতা আনতে নানগাওয়াকে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে মিয়ানমারের বর্তমান অচলাবস্থা। তবে ব্যাবসাখাতে নানগাওয়ার সুনাম রয়েছে দাবি করে বিবিসির স্টেনলি কেওনডা দাবি করেন, নানগাওয়া উৎপাদনমুখী ফার্ম্গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে অতীতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত বছর এক সাক্ষাতকারে নানগাওয়া বলেন, শান্তিপূর্ণ দেশগুলোতে বিনিয়োগ বেশি হয়। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে কাজ করবো। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পরই নানগাওয়া ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর প্রথম কাজ-ই হলো ‘কাজ, কাজ আর কাজ।’ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি ব্যাপক অবদান রাখবেন বলেও জানান।