নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ পেলে কী করবে বিএনপি?

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে ও বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি, তর্ক ও বিতর্ক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝেও এমন সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’ একধিক মন্ত্রণালয় দেয়ার কথা বলে বিএনপিকে সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু ওই সময় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার না হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি।

তবে আসছে নির্বাচনে ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’ আমন্ত্রণ পেলে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তৃণমূলের অনেক নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লহ্মীপুর জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, এবারে নির্বাচনকালীন সরকারের অফার গ্রহণ করে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। কারণ মামলা-হামলায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জর্জরিত। বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের বিবেচনায় আনতে হবে।’

‘আর যে কোনোভাবে যদি নির্বাচন হয়, সংগঠন যদি শক্তিশালী করা যায়, তাহলে বিএনপির কাঙ্ক্ষিত জয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না’- যোগ করেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির এক সদস্য জানান, ‘বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন দেখে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে- এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার মানে পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ পেলে হয়তো দল সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এস এম মোশারেফ হোসেন মিশু বলেন, ‘গত নির্বাচনে দুই-তিনটা মন্ত্রণালয় দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন যদি চারটাও দেয়ার কথা বলে, আমার মনে হয় এতে রাজি হওয়া ঠিক হবে না। সেটি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না- এটি বিএনপির সঠিক সিদ্ধান্ত। দলীয় সরকারের অধীনে যদি বিএনপি নির্বাচনে যায়, তাহলে ২০১৪-তে কেন যায়নি? নেতাকর্মীসহ সারাদেশের মানুষ যে ভোগান্তির শিকার হলেন, তা শুধু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেই। এখন কেন যাবে?’

‘এরপরও যদি যায় তাহলে নির্বাচনকালীন সরকার ভালো-মন্দ যা-ই করুক তার কিছু দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। ওই সরকার যদি ৫ জানুয়ারির চেয়েও খারাপ ইলেকশন করে এবং সেখানে যদি বিএনপি নির্বাচিতও হয়; সেক্ষেত্রে ওই সরকার বা আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা যাবে না। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকারে যাওয়া বিএনপির উচিত হবে না।’

‘এছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে গেলে তৃণমূলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। কর্মীদের স্পৃহা, মনোবল নষ্ট হতে পারে। পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মীরা এটি পজিটিভলি নেবে বলে মনে করি না’- যোগ করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থীরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে সংস্কার করেছে। এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। তার সঙ্গে সবার যোগাযোগ আছে। সিদ্ধান্তটা যদি ওনার সঙ্গে আলাপ করে নেয়া হয় সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে না। আর যদি ওনাকে বাইরে রেখে কেউ এসব করতে যায় তাহলে প্রতিক্রিয়া আগের চেয়ে আরও খারাপ হতে পারে।’

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’