মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণ

প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছে না রাজধানীবাসী!

প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছে না রাজধানীবাসী। কারণ মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণে নিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত শরীরে যাচ্ছে বিষ, আক্রান্ত হচ্ছে অ্যাজমা রোগে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ মানুষ অ্যাজমা তথা শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে। এদিকে রোগীর আসন সংকুলান না হওয়ায়, ছয়শ’ শয্যার এই হাসপাতালকে দেড় হাজার শয্যায় রুপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বায়ুতে সাধারণত ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, দশমিক ৩১ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি থাকে। যদি কোনো কারণে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্যান্য গ্যাসের ঘনত্ব বেড়ে যায় কিংবা বালুকণার হার বেড়ে যায় তবে সেটি দূষিত হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর আশপাশের শিল্পাঞ্চলসহ ইটভাটা ও গাড়ির ধোঁয়া, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং নাগরিক বর্জ্য ঢাকার বাতাসে প্রতিনিয়ত বিষ ছড়াচ্ছে।

সিএনজিচালিত যানবাহন থেকে বের হয় ক্ষতিকারক বেনজিন। এই বেনজিন শুধু অ্যাজমাই নয়, ক্যানসারেরও অন্যতম কারণ। এ ছাড়া সালফার ও সিসাযুক্ত পেট্রল, জ্বালানি তেলে ভেজাল ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনের কারণে গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, অ্যালডিহাইডসহ সিসার নিঃসরণ বাতাসকে দূষিত করছে।

এদিকে, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালু, সিমেন্ট, মরিচাযুক্ত রড ফেলে রাখা হচ্ছে রাস্তার পাশেই। আবার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও অনেক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ধুলাবালুর পরিমাণ বাড়ছে অনেক গুণ। এছাড়া উন্নয়নের নামে রাজধানীজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। যা ধুলা দূষণকে আরো প্রকট করে তুলছে।

রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে ধুলা উড়ছে, তা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ উল্লেখ করে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাজমা এখন আর শীতকালীন রোগ নয়। বায়ু দূষণের কারণে সারা বছরই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা শহরে অ্যাজমা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বায়ু দূষণের কারণে প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ারও অবকাশ নেই রাজধানীবাসীর।

তিনি জানান, নারী-পুরুষ সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছেন অ্যাজমায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। যদিও পঞ্চাশ শতাংশ শিশুর অ্যাজমা চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে শিশু ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ধুলাবালু মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রাজধানীতে দূষিত বায়ুর কারণে এ রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। বিশেষ করে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৫ জন নবজাতকই এখন অ্যাজমা বা শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢোকার পর সেখানে ফ্রি রেডিক্যালের সৃষ্টি হতে পারে, যা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে বলেও জানালেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।-খবর পরিবর্তন ডটকমের।