আজও ঢামেক মর্গে টাম্পাকো দুর্ঘটনার ৫ মরদেহ
শিল্প নগরী টঙ্গীর বিসিক এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস্ লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর আজ ১০ সেপ্টেম্বর। গত বছর এই দিনে কারখানাটির গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো কারখানা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়। এতে কারখানার ৫ তলা ভবনসহ অধিকাংশ অবকাঠামো ভেঙে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। আগুনে পুড়ে ও ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন ৪২ জন ও আহত হন প্রায় ৭৫ জন।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ার নিহত ৫ শ্রমিকের পরিবারকে ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও দেয়া হয়নি। গত এক বছর ধরে ডিএনএ টেস্টের অপেক্ষায় ৫ মরদেহ এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে। এরা হলেন- নাজিম উদ্দিন, মাসুদ আহমেদ, জহিরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান ও জয়নুল ইসলাম। এদেরকে মূলত নিখোঁজ হিসেবেই গণ্য করা হয়।
এছাড়া ঢামেক মর্গে ডিএনএ টেস্টের জন্য নেয়া টাম্পাকোর মোট ৯ মরদেহের মধ্যে ৪ মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার এক বছরের মাথায় ধ্বংসস্তুপ অপসারণ করে টাম্পাকো আবারও উঠে দাঁড়াচ্ছে। গত ৯ আগস্ট নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আজ রোববার থেকে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসের মধ্যে স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে এবং এবছরই পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষের। দুর্ঘটনার পর গত এক বছর ধরে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায় আধুনিক প্রযুক্তির এ কারখানাটি হবে একটি গ্রিণ ফ্যাক্টরি।
টাম্পাকো কারখানা দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের ওয়ারিশকে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেয়া হয়। নিহত মোট ৪২ জনের মধ্যে ৩২ জনকে এবং আহতদের মধ্যে মোট ৪০ জনকে এ অনুদান দেয়া হয়েছে। ডিএনএ টেস্টে মরদেহের পরিচয় শনাক্তসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় বাকিরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
এছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ বাবদ শ্রম আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের জন্য আরো এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। নিহত পথচারি পোশাক শ্রমিক আসমার পরিবারকে দেয়া হয় আরো নগদ ৫০ হাজার টাকা।
এই দুর্ঘটনায় মালিক পক্ষকে দায়ী করে নিহত শ্রমিক জুয়েলের বাবা আব্দুল কাদের গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি মামলা করা হয়। এছাড়া গাজীপুর জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, শ্রম মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাক) পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
অপরদিকে ধ্বংসপ্রাপ্ত কারখানার তিন কোটি টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে কারখানার পক্ষ থেকে আরো একটি পাল্টা মামলা করা হয়। এসব মামলা ও তদন্ত কমিটির একটিও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। দুর্ঘটনার পর দমকল বাহিনী ও গাজীপুর প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এর পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, গাজীপুর মহানগরির টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ) আসনের সাবেক দুই বারের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর সকালে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভবনের তিনটি ধসে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৭৫ জন।
শ্রমিক-কর্মচারিরা জানিয়েছেন, কখনো তাদের বেতন ভাতা বকেয়া রাখা হয়নি। প্রতি মাসের এক তারিখের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধ করা হতো। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারিদের ছেলে মেয়েদের কারখানার পাশে শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ফ্রি পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন