ফের সরগরম হয়ে উঠেছে গাজীপুরের নির্বাচনী মাঠ
চারদিনের থমথমে পরিবেশ কাটিয়ে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাঠ। গত চারদিন সর্বত্র বিরাজ করছিল এক শোকাবহ অবস্থা। মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কর্মী-সমর্থকরা ভেঙে পড়েছিলেন অনেকটাই।
জানা যায়, অনেক প্রার্থী তাদের নির্বাচনী বাজেট প্রায় খরচ করে ফেলেছিলেন। এমন সময় নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। পরে মেয়র প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গেলে সব প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি ছিল সুপ্রিম কোর্টের দিকে। চারদিনের প্রতীক্ষা শেষ হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। সুপ্রিম কোর্ট ২৮ জুনের মধ্যে ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিলে সবার মনে স্বস্তি ফিরে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী জানান, নির্বাচনে যে বাজেট নিয়ে নেমেছিলেন তার বেশিরভাগই খরচ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে তারিখ দিলে ফের নতুন করে খরচ করতে হবে।
আবার কয়েকজন প্রার্থী জানান, তাদের নতুন করে নির্বাচনী খরচ জোগাড় করতে হবে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে সব প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আদালতের রায় শোনার পর থেকে অনেকে বিভিন্ন মিডিয়া, নিজ ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মন্তব্য দিতে শুরু করেন। তবে কেউ কেউ ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। কারণ হিসেবে ওই সময়ে তারা আসন্ন নির্বাচনের সময় বৃষ্টিপাত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক স্থগিত হলে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবার সরব হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটাদের মাঝে দেখা দেয় আনন্দের ঝিলিক। আদেশকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার ও টঙ্গীতে মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে নগরীর কোথাও কোনো প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা করতে দেখা না গেলেও কোনো কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঘরোয়া প্রচারণা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন বন্ধের গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছিল। গাজীপুরের মানুষ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ও অপপ্রচারকীদের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।
সন্ধ্যায় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর জেলা শহরে দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার পর তিনি পুরোদমে, নতুন উদ্যামে নির্বাচনী কাজে নেমে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে গত রোববার করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গণগ্রেফতার বন্ধ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি। এছাড়াও তিনি নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় কর্মী সমর্থক ও ভোটারদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, আগামী ১৩ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ওই দিন বিকেল তিনটায় এ বিষয়ে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জানান, এ নির্বাচনের জন্য নতুন করে তফসিলের প্রয়োজন হবে না। কেবলমাত্র ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নেয় নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী প্রার্থীরাও প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। জমেও উঠেছিল প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীদের রাত-দিন প্রচারণার পাশাপাশি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন নিয়ে ব্যস্ত ছিল নির্বাচন কমিশনের কর্তা-ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজ একটি রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট গত ৬ মে এ সিটির নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। আদালতের ওই আদেশে হঠাৎ করে থেমে যায় প্রার্থীদের সকল ব্যস্ততা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন