সেই রুমানা এখন আইনে স্নাতক
স্বামীর নির্যাতনে দৃষ্টিশক্তি হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুর এবার আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছেন। কানাডার ভ্যাংকুভারের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার (ইউবিসি) পিটার এ অ্যালার্ড স্কুল অব ল থেকে তিনি স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
বুধবার (২৪ মে) স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারীদের সম্মানে কানাডার চ্যানশুন কনসার্ট হলে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। সেখানে গ্রাজুয়েট হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন রুমানাও।
স্বামীর নির্যাতনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে রুমানা সমবেতদের বলেন, ‘ওই ভয়াবহ হামলা, জীবনশঙ্কায় ফেলা হামলার ফলে আমি অন্ধ হয়েছি। এই পৃথিবীকে আমি আর দেখতে পাইনি।’ শেষে রুমানা আরো বলেন, বাংলাদেশে পারিবারিক নির্যাতন ও আইনি ব্যবস্থার বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আইন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিতে আগ্রহী হয়েছি।
আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকায় ধানমণ্ডির বাসায় স্বামী হাসান সাঈদের নির্যাতনের শিকার হন রুমানা। ওই হামলায় নাকে ক্ষত হওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টি শক্তি হারান তিনি। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর বহু বাধা আর জটিলতা মোকাবেলা করে দুই বছরের মাথায় ইউবিসি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর আইন পড়া শুরু করেন।
সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার জন্য রুমানা মঞ্জুরকে যখন মঞ্চে নেয়া হচ্ছিল হাজার খানেক উপস্থিতির মধ্যে ছিল পিনপতন নিরবতা। রুমানা তার ওপর হওয়া ভয়াবহ হামলার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, জীবনশঙ্কায় ফেলা হামলার ফলে আমি অন্ধ হয়েছি। এই পৃথিবীকে আমি আর দেখতে পাইনি।’
রুমানা বলেন, ‘হামলার পর অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছে। তবে আমি যখন হারিয়ে গিয়েছিলাম তখন ইউবিসি আমাকে পথ দেখিয়েছে। ইউবিসি পরিবারের সমর্থন ছাড়া আইন পড়া আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।’ বিশেষ করে অ্যালার্ড ল স্কুলের ডিন ক্যাথরিন ডুভার্নকে ধন্যবাদ জানান রুমানা।
এসময় রুমানার সঙ্গে ছিল তার ১১ বছরের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে ছোট্ট ওই শিশুর সামনেই তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
অনুষ্ঠানের পরে রুমানার প্রশংসা করে অ্যালার্ড ল স্কুলের ডিন ডুভার্ন বলেন, ‘আজকের সকালটা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। সে অনন্য, সে নিজের পথ নিজে তৈরি করেছে। আমি আরেকজন মানুষের কথা ভাবতে পারি না যিনি তার মতো সক্ষম হতে পারে।’
কনসার্ট হলের বাইরে রুমানাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন অনেকে। যারা পুরো কোর্সজুড়ে তার সঙ্গে ছিলেন। তার অনেক সহপাঠীই রুমানার পথপ্রদর্শক হিসেবে তাদের সময় দিয়েছেন। ডুভার্ন বলেন, ‘রুমানা তার সহপাঠীদের ওপর খুবই জোর ছাপ ফেলেছেন।’
২০১১ সালের ৫ জুন নির্যাতনের শিকার হন রুমানাকে ল্যাবএইড ও ভারতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। পরে তিনি কানাডায় চলে আসেন। ওই ঘটনার সময়ে তিনি ইউবিসিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছিলেন। ওই হামলার ঘটনায় তার স্বামী হাসান সাঈদ সুমনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কারাগারেই মৃত্যু হয় রুমানার স্বামী সাঈদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন