অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর জানা যাবে কাল

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা আশার কথা শুনিয়েছেন। ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট আস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনেরও চুক্তি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনটির মানবদেহে প্রথম দুটি ধাপের পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক ও বিস্তারিত ফলাফল জানা যায়নি। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আগামীকাল (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত হবে প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিস্তারিত প্রতিবেদন।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল এপ্রিল থেকেই। প্রথম দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছিল ভ্যাকসিন। তাদের মধ্যে একজন নারীবিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটো। তারপর প্রথম পর্যায়ে স্বল্প সংখ্যক মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। এই দুই পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট ইতিবাচক বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালাচ্ছিল অক্সফোর্ড। এই পর্যায়ের ট্রায়ালেও ভ্যাকসিনের প্রভাব সন্তোষজনক বলেই দাবি করা হয়েছে। যদিও টিকার ডোজ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি।

ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলার সময়েই ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই ট্রায়াল শুরু হয়। ব্রাজিলে করোনার হটস্পট সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোতে তিন হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এই হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে উইটওয়াটারস্র্যান্ড ইউনিভার্সিটি। বেছে নেওয়া হয় ২ হাজার জন স্বেচ্ছাসেবককে। ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়ালের রিপোর্টও ইতিবাচক বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

বিশ্বের দুই শতাধিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবন প্রচেষ্টার মধ্যে যে ১৪টি মানুষের শরীরে ট্রায়াল করা হয়েছে তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডার্না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে অক্সফোর্ডই সবথেকে এগিয়ে রয়েছে। মডার্না তাদের প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪৫ জন প্রাপ্তবয়স্ককে ২৫ মাইক্রোগ্রাম, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ও ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে ২৮ দিনের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি করে শট দেওয়া হয়। তারা এতদিন পর্যবেক্ষণে ছিলেন। দেখা গেছে, প্রত্যেকের শরীরেই আরএনএ ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্টের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। প্রথম পর্যায়ে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল এতদিনে তাদের শরীরে কী পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা বেড়েছে সেটা দেখেই ভবিষ্যতে কতটা কার্যকরী প্রমাণিত হবে তার আভাস পাওয়া যাবে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য ডোজ ঠিক করা হবে।