আইইউবি র শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গতবারের ন্যায় এবারো সরস্বতীপূজার প্রস্তুতি

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আগামী সপ্তাহে। বিদ্যা, জ্ঞান, কলা ও শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে দেবী সরস্বতীর পূজা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজা হলেও বেসরকারি ইউনিভার্সিটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের আসন্ন সরস্বতী পূজা আয়োজনের অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানুয়ারির শেষদিকে পূজা আয়োজনের লিখিত অনুমতি চাওয়া হলেও গত সপ্তাহে তাদের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চর্চা করছে সর্বস্তরের জনগণ এবং ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রতি বছর বার বার আবেদন পত্র দিলেও আশানরূপ কোনো প্রতিকার না আসায়, গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ অগ্রাহ্য করে শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পরে ক্যাম্পাসের বাহিরে রমনা কালী মন্দিরে প্রথমবার পূজো করে। গতবছরের ন্যায় এবছর ক্যাম্পাসের অদূরে ভাটারায় সরস্বতীপূজার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীরা। এই উপলক্ষ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ২য় বারের মত জ্ঞান, বিবেক ও বিদ্যাময়ী মা সরস্বতী দেবীর পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে এক মহোৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

সরস্বতীপূজা দুর্গাপূজার মতোই সর্বজনীন পূজা। দলমত-নির্বিশেষে শিশু-বৃদ্ধবনিতা সরস্বতীপূজায় অংশগ্রহণ করে। মায়ের কাছে বিদ্যা চাইতে সবাই জোড় হাত তুলে প্রণাম করে। মা তো বিদ্যার দেবী, তাই তাঁর কাছেই বিদ্যা চাইবে সবাই। বিদ্যা যদি না পাই, তবে তো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারব না। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে বিদ্যার বিকল্প নেই। আচার-আচরণ, স্বভাব-প্রকৃতি সবকিছুই পরিপূর্ণতা পায় বিদ্যার গুণে। তাই বিদ্যার দেবীকে অঞ্জলির মাধ্যমে নিবেদন করে শিক্ষার্থীরা—তাদের মনস্কামনা যেন দেবী সরস্বতী পূরণ করেন, এই প্রার্থনাই পূজার মূলমন্ত্র।

সরস্বতীপূজা যে শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের নিয়েই হয় তা কিন্তু নয়, তাদের সঙ্গে ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ থাকে এ পূজার আকর্ষণীয় দিক। পূজামণ্ডপে ছেলেমেয়েদের সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে গান, আরতি, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, রঙিন সাজে ধূপধূনা আর ফুল দিয়ে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখলে মন আনন্দে ভরে যায়, কে হিন্দু, কে মুসলমান, কেই-বা খ্রিষ্টান—বোঝা কঠিন। এ যেন এক মিলনমেলা। তখনই সত্যিকারভাবে ফুটে ওঠে সেই চিত্র—‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

পূজার দিনে সকলের কামনা থাকে, দেশটি যেন সত্যিকারভাবেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের আলোকে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ভরে থাকে বছরের সারাটা দিন। সরস্বতী দেবীর কাছে সকলের প্রার্থনা যেনো একটিই, ‘মাগো, তুমি বিদ্যা দাও সকলেরে’।

এই মহোৎসবকে সাফল্যমন্ডিত করতে সকলের সবান্ধব উপস্থিতি ও সহযোগিতা কামনা করছে পূজো কমিটির সদস্যরা। তাদের চাওয়া, পূজা প্রাঙ্গণ মুখরিত যেনো হয়ে উঠে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের পদচারণায় এবং অন্যতম শক্তি হলো তাদের ক্যাম্পাসের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ এবং মমতাময়ী শেখ হাসিনা র নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে সহযোগিতা করে, এটিই সকলের কামনা।