আজো বেছে আছে পনেরশত বছর আগের ছায়া দানকারী সাহাবী গাছ

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম। সম্মানিত দৃশ্যমান এই পবিত্র গাছটি জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় অবস্থিত। এটি এমনই একটি গাছ, যে গাছটি কুদরতীভাবে শত বর্গ কিলােমিটার জুড়ে বিস্তৃত মরুভূমিতে পনেরশত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটি দেখতে খুবই সুন্দর।

শুনতে অবাক লাগলেও এখনাে কিন্তু বেঁচে আছে গাছটি। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘােষণা দেন।৫৮২ ঈসায়ী সনে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন (দুনিয়াবী জিন্দিগীতে) ১২ বছর, তিনি উনার চাচা আবু তালিব উনার সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কা থেকে তৎকালীন শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে উনারা সিরিয়ার অদূরে জর্ডানে এসে উপস্থিত হন।জর্ডানের সেই এলাকাটি ছিল শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত উত্তপ্ত বালুকাময় এক মরুভূমি।

নূরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার চাচা আবু তালিব মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন উনারা একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু আশ-পাশে উনারা কোনাে বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে যত দূর চোখ যায় কোনাে বৃক্ষরাজির সন্ধান পাচ্ছিলেন না।কিন্তু দূরে একটি মৃতপ্রায় গাছ দেখতে পেলেন উনারা। উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে গাছটি ছিল লতাপাতাহীন শীর্ণ ও মৃতপ্রায়। উনারা মরুভূমির উত্তাপে শীর্ণ পাতাহীন সেই গাছটির তলায় বিশ্রাম নিতে বসেন।উল্লেখ্য যে,নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পথ চলতেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে মেঘমালা উনাকে ছায়া দিত এর বৃক্ষরাজি উনার দিকে হেলে পড়ে ছায়া দিত। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন উনাদের ছায়া দিতে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে মৃতপ্রায় গাছটি সজীব হয়ে উঠে এবং গাছটির সমস্ত ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে যায়।এদিকে এ অভূতপূর্ব বিষয়টি জারজিস ওরফে বুহাইরা নামক একজন খ্রিস্টান পাদ্রি খেয়াল করলেন। তিনি দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলেন। আবূ তালিব ও নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পাদ্রীর কাছে গেলে পাদ্রী বলেন, আমি কোনােদিন এই গাছের নিচে কাউকে বসতে দেখিনি।পাদ্রী আরও বললেন, গাছটি ছিল পাতাহীন কিন্তু আজ গাছটি পাতায় পরিপূর্ণ।

এই ছেলেটির নাম কি? চাচা আবু তালিব উত্তর দিলেন: ইনি আমার সম্মানিত ভাতিজা মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পাদ্রী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, উনার বাবার নাম কি? হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম। মাতার নাম?:হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে এবং উনার পরিচয় শুনে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকি রইলাে না যে, ইনিই সেই বহু প্রতীক্ষিত শেষ নবী! চাচা আবু তালিবকে ডেকে পাদ্রী বললেন, আপনার সঙ্গে বসা এই সম্মানিত বালক হচ্ছেন সারা জগতের নবী ও রসূল!

এবং এইজগতের শেষ নবী।তিনি বলেন, আমি উনার সম্পর্কে বাইবেলে পড়েছি এবং আমি ঘােষণা দিচ্ছি, ইনিই শেষ নবী।চাচা আবু তালিব ও নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই গাছটি পনেরশত বছর আগে যে অবস্থায় ছিল আজো সেই অবস্থায় জর্ডানের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে। সুবহানাল্লাহ!গাছটি সবুজ লতা-পাতায় ভরা এবং সতেজ ও সবুজ। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গাছটি যেখানে অবস্থিত তেমন মরুদ্যানে কোনাে গাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গাছটির আশপাশের কয়েকশ’

কিলােমিটার এলাকার মধ্যে আর কোনাে গাছ নেই। গাছটির চারিদিকে দিগন্ত জোড়া শুধুই মরুভূমি আর মরুভূমি। মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশের কারণে জন্ম থেকেই গাছটি ছিল পাতাহীন শুকনাে কিন্তু একসময় মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে গাছটি সবুজ পাতায় ভরে উঠে এবং আজ পর্যন্ত গাছটি সবুজ শ্যামল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমির মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী ক্ষমতার নিদর্শন।