আবারও শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘এনপিএস’র চালান জব্দ

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আবারও ধরা পড়েছে নতুন মাদক এনপিএস (নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস) এর চালান। শনিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ইউনিটের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘ফরেইন পোস্ট অফিসের’ মাধ্যমে ১৬০ কেজি এনপিএস জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস হাউস।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই’র সহযোগিতায় জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আগত জেট এয়ারওয়ের ৯ ডব্লিও ২৭৬ ফ্লাইটে ৯টি এনপিএস এর চালান আসবে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে নজরদারি শুরু করে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বরই ৯টি সন্দেহজনক কার্টন আসে। যা ফরেইন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আটক করা হয় এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরবর্তীতে আজ দুপুরে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কার্টনগুলো খোলা হলে ভেতরে ‘গ্রিন টি’ এর মতো দেখতে পণ্যগুলো আটক করা হয়।প্রাথমিকভাবে যা এনপিএস (নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস) হিসেবে ধারণা করা হয়। পরবর্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহযোগিতায় একজন ফরেনসিক এক্সপার্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় জব্দকৃত ওই কার্টনের পণ্যগুলো এনপিএস। ওজনে ১৬০ কেজি।

তিনি জানান, এ পণ্যগুলোর রফতানিকারকের নাম জিয়াদ মুহাম্মদ ইউসুফ, ঠিকানা আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া। আর আমদানিকারক এশা এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকার তুরাগ থানাধীন ব্লক-ডি, সড়ক ২ হাউস নং-২৮।

তিনি আরও বলেন, ১৬০ কেজি এনপিএস জব্দের বিষয়টি তদন্তের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইনানুগ অভিযান পরিচালনার বিষয়টি এখন তারাই দেখছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট প্রথম এর অস্তিত্ব মেলে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা থেকে জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফ নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় এনপিএসের একটি চালান পাঠান। এ দেশে নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে চালানটি পাঠানো হয়। চালানটি কয়েক দিন আগে ইথিওপিয়া থেকে কয়েকটি দেশ ঘুরে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে।

এরপরই দুই দফার অভিযানে বিমানবন্দর ও শান্তিনগর প্লাজা থেকে মোট ৮৬১ কেজি এনপিএস-সহ মো. নাজিম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হওয়া এনপিএস’র আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, এনপিএস অপব্যবহারের পদার্থ, যা ১৯৬১ সালের প্রচলিত মাদক আইন অথবা ১৯৭১ সালের ওষুধ আইনে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। যদিও জনস্বাস্থ্যের জন্য এটা প্রচণ্ড রকমের ক্ষতিকর। পণ্যটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ এর ‘খ’ তফসিলে ২ নং ক্রমিকভুক্ত, যা একই আইনের ১৯ (১) টেবিলের ১০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এনপিএস’র ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, এনপিএস মূলত চিবিয়ে বা পানিতে গুলিয়ে চায়ের মতো খাওয়া হয়। খাওয়ার পর ইয়াবার মতোই ক্লান্তি না আসা, ঘুম না হওয়াসহ শারীরিক বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এনপিএস আসক্ত ব্যক্তি মানসিক বৈকল্যে ভোগেন। সামাজিকভাবে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করেন। কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। বেঁচে থাকা তার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। একসময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, এনপিএস তৈরির উপাদানগুলো বৈধ হলেও এর ভয়াবহতার কারণে অনেক দেশ স্থায়ীভাবে এনপিএস নিয়ন্ত্রণ করছে, অনেক দেশ অস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধও করছে। এনপিএসের ব্যবহার ব্যাপকমাত্রা পেলে যুবসমাজ ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হবে।