আর মুখ বুজে থাকব না : কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিরোধ গড়েছিলাম। কিন্তু জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সেদিন যদি প্রতিবাদ করে ভুল করে থাকি সে কথাটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে জানাতে হবে। সেসব যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। তাহলে অন্তত বলতে পারব বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলে যেতে হয়েছে।

রোববার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ৭৫-এর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মিলনমেলায় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ এমন হবে জানলে আমি বঙ্গবীর যুদ্ধে যেতাম না। যে লতিফ সিদ্দিকীরা আওয়ামী লীগকে জন্ম দিয়েছিলেন তাকেই দল থেকে বের করা হয়েছে। যারা তার স্যান্ডেল টেনেছেন তারা এখন মন্ত্রী হয়ে বসে আছে।

তিনি বলেন, রাতদিন আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, সেখানে কি করে যাই যেখানে মতিয়া চৌধুরী, ইনু বসে আছে? যারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন। আমি কোনো কিছু চাই না, সারা জীবন সহ্য করেছি। আর চুপ থাকব না। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিবাদে প্রতিরোধকারীদের স্বীকৃতি দিতেই হবে।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। যদি না দেয়া হয় তাহলে মুখ বুজে বসে থাকব না। আমি মনে করি এই স্বীকৃতি আদায় হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একইসঙ্গে বলতে চাই- কোন মানুষ যদি পিতৃ পরিচয় হারিয়ে ফেলে, কেউ যদি পিতৃ পরিচয় অস্বীকার করে, তাহলে তার আর কিছু থাকে না। তাকে কিন্তু সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। এটা মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আজ প্রায় ১৯ বছর আমরা দু’ভাই পাশাপাশি কোনো জনসভায় বসিনি। খুব সম্ভবত একটি জানাজায় আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হলে আমরা তার সঙ্গে তখন কথা বলতে পেরেছি। আমার বাবা কথা বলতে পেরেছে। কিন্তু এই প্রথম ১৯ বছর পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য, দেখা করার জন্য তিন তিনবার চেষ্টা করেছি। তার পিএসদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে কোনো সাড়া পায়নি। তাকে না পেয়ে শেষে চিঠি দিয়েছি। যেন এই অনুষ্ঠানে সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পায়নি।

বঙ্গবীর বলেন, আজকের এই মিলন মেলায় যেন না আসতে পারে কেউ তার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ইয়াহিয়ার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু দেশের ভেতর এমন শত্রুতা আগে কখনও দেখিনি। আজকে সরকারের জয়জয়কার। যেদিকে তাকাই সেদিকে আওয়ামী লীগ, সেদিকে শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব জানি না।

এ সময় নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন একদিকে শ্রমিক নেতা অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী। তিনি আজকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কারও পাশে দাঁড়াই না। ন্যায় ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াই। এ জন্যই পত্রিকায় দেখে আমন্ত্রিত না হয়েও চলে এসেছি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাদের সিদ্দিকীকে স্বীকার করি না, তবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্ট পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধকে স্বীকার করি। তার নেতৃত্বেই সেদিন প্রতিরোধ যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম। তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তার মর্মকথা বোঝার সামর্থ্য অনেকের নেই। বক্তব্য বোঝার প্রজ্ঞা এ দেশের রাজনীতিবিদদের নেই।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাবুল সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বীরপ্রতীক, অর্থ সম্পাদক আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান কায়সার চৌধুরী।