আহত সেনারা ঢাকায়, চলছে চিকিৎসা

পাহাড়ধসে আহত সেনা সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় মঙ্গলবার দুই কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হন ১০ সদস্য।

পাহাড়ধসের ঘটনায় সৈনিক মো. আজিজুর রহমান এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সৈনিক আজিজুর রহমানের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিবাহিত আজিজুর রহমান এক কন্যাসন্তানের জনক।

নিহতরা হলেন মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহিন আলম।

মেজর মাহফুজুল হকের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংড়ায়। তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ৪৪তম বিএমএ লং কোর্স শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি বিবাহিত। তার পাঁচ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

ক্যাপ্টেন তানভীর পটুয়াখালীর বাউফলের সন্তান। তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ৬৪তম বিএমএ লং কোর্স শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি সদ্যবিবাহিত।

ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের আজিজুল হক ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

সৈনিক মো. শাহিন আলমের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিবাহিত ও এক ছেলের জনক তিনি।

আইএসপিআর জানায়, মঙ্গলবার ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন থেকে নির্দেশনা পেয়ে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে মাটি ও গাছ সরানোর কার্যক্রম শুরু করেন।

উদ্ধার কার্যক্রমের একপর্যায়ে আনুমানিক বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ ফের ধসে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান এবং মাটিচাপা পড়েন। পরবর্তীতে একই ক্যাম্পের অন্য একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কর্মকর্তাসহ চারজনের মরদেহ এবং ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

এদিন বিকেলেই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি হতাহত সব সেনাসদস্য এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

গত তিনদিনের প্রবল বর্ষণে সোমবার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস শুরু হয়। এতে সমগ্র এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল সোমবার থেকে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত আছেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ জনে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আপাতত উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।