ইসি জ্ঞানপাপীর ভূমিকা পালন করেছে : ইসলামী আন্দোলন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এবার মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু একপেশে নির্বাচন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মানুষের পরিবর্তনের যে চিন্তা তা নস্যাৎ করা হলো। এ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন শুধু নিরবই নয় জ্ঞানপাপীর ভূমিকা পালন করেছে। যা জাতি কখনো ভুলে যাবে না।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এটিএম হেমায়েতউদ্দীন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী মুফতি মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিকেলে নির্বাচন বর্জন করেছেন। আমরা দলীয়ভাবে ফলাফল বর্জন করবো কিনা সে সিদ্ধান্ত দলীয় আমীর জানাবেন। তবে ফলাফল কি হবে তা বুঝতে বাকি নেই।

আপনারা এ ভোট প্রত্যাখ্যান করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশে তো আজ ভোটই হয়নি তাহলে বর্জন বা প্রত্যাখান করবো কিভাবে? সবাই তো দেখেছেন। নিজের মনকে প্রশ্ন করলেই বুঝবেন আজ কি হলো!’

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ২৯৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। বিভিন্ন সংসদীয় আসনসহ দেশের সব আসনেই প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় হাতপাখা মার্কার প্রার্থীর উপর হামলা, কেন্দ্র দখল, এজেন্ট প্রবেশ বাধা ও বের করে দেয়া, ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নৌকা, লাঙ্গল ও সাইকেল মার্কায় ভোট দেয়া, ভোটারদের বাধা দেয়া, দেখে নেওয়ার হুমকি এবং পোলিং এজেন্টদেরকে গুম ও পুলিশি হয়রানিসহ নানা অনিয়ম করে নির্বাচনকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীর ওপর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকায় মহাজোটের কর্মীরা হামলা করেছে।

পিরোজপুর-২ আসনে সাইকেল প্রতীকের ক্যাডার বাহিনী সশস্ত্র মহড়া দিয়ে হাতপাখার কর্মীদের ওপর দিনভর হামলা চালায়। এতে অসংখ্য কর্মী আহত হয়।

চাঁদপুর-১ আসনে হামলা করে প্রার্থীর গাড়ি ভাংচুর করে সহযোগীদেরও আহত করা হয়। দিনাজপুর-৪ আসনে রশিদুল হক নামের এক এজেন্টকে পুলিশ আটক করেছে। নীরফামারী-৪ আসনে বেলা ১১টায় হাতপাখার সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। পুলিশি প্রহরায় সরকার দলীয় লোকজন লাঙ্গল মার্কায় সিল মারে।

বগুড়া-৩ আসনে প্রার্থীর গাড়ি পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ইউএনওর উপস্থিতিতে নিয়ে যায়। নাটোর-১ আসনে ১নং লালপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বালিতিতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার না দিয়ে ভোটারদের হাতে শুধু কালি দিয়ে বের করে দেয়া হয়।

নোয়াখালী-২ আসনে ১০৩ কেন্দ্রের সব কেন্দ্রেই বেলা ১১টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র দখল করে নৌকায় প্রকাশ্যে সিল মারে। চাঁদপুর-৩ আসনে ৩নং কল্যাণপুর ইউনিয়নে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় হাতপাখার পাঁচ কর্মী আহত হয়।

শেরপুর-১ আসনে সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হলেও রিটার্নিং অফিসার এ ব্যাপারে অভিযোগ গ্রহণ করেননি। ময়মনসিংহ-১০ আসনে এজেন্টকে বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়।

ঢাকা-৬ আসনে দক্ষিণ মহসিন গার্লস স্কুল থেকে ইমরান নামে এক এজেন্টকে গুম করা হয়। ঢাকা-১৬ আসনে মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বোমা ফাটিয়ে কেন্দ্র দখল এবং ভোটারদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। কুষ্টিয়া-২ আসনে ভেড়ামারার বামুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখা প্রতীকে সিল মারায় নৌকার লোকেরা সেগুলো ছিড়ে ফেলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ঢাকা ৮ আসনের প্রার্থী ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অবুল কাশেম, ঢাকা মহানগর উত্তর সেক্রেটারি মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করিম মারুফসহ প্রমুখ।