ঈদের দিন সড়কে ঝরলো ২০ প্রাণ

ঈদুল ফিতরের দিন বুধবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ফরিদপুরে ৬ জন, লালমনিরহাট, নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জে ৩ জন করে, ঝিনাইদহ ও টাঙ্গাইলে ২ জন করে এবং ঢাকার অদূরে সাভারে একজন রয়েছেন।

ফরিদপুর

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ভোরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ বাসযাত্রী নিহত ও অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার সকাল ৭টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলধী রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ফরিদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল জানান, ধুলদী রেলগেট এলাকায় একে ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

এতে ঘটনাস্থলেই ৪ যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর আরও দু’জন মারা যান। আহত ১৩ যাত্রীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকায় বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। ঈদুল ফিতরের দিন বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পিকআপ ভ্যান নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে কয়েক যুবক ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে ঘুরতে যাচ্ছিলেন। পিকআপ ভ্যানটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে উক্ত স্থানে ঢাকাগামী কিরনমালা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। পরে ৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক আরও একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় না জানা গেলেও সবার বাড়ি নাটিয়াপাড়ায় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মোশারফ হোসেন।

সাভার

রাজধানীর অদূরে সাভার আশুলিয়ায় পুলিশ বহনকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে লিচু বোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে নাদিম হোসেন নামে (২০) শিল্প পুলিশের কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিল্প পুলিশের আরও তিন সদস্যসহ ৪ জন। বুধবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার গণকবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতরা হচ্ছেন- শিল্প পুলিশের নায়েক জাকারিয়া, কনস্টেবল কাউছার, কনস্টেবল আনিছুজ্জামান এবং অজ্ঞাত অটোচালক। তাদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মলয় সাহা জানান, ডিইপিজেডের নতুন জোন থেকে রাতের ডিউটি শেষে শিল্প পুলিশের ওই চার সদস্য অটোতে করে তাদের শ্রীপুর এলাকায় ব্যারাকে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার খদ্দর খালিশপুর এলাকায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছে ধাক্কা দিলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কোটচাঁদপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আলিম হোসেনের ছেলে বিপলু হোসেন (২০) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে রানা (১৩)।

লালমনিরহাট

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় যাত্রীবাহী লেগুনা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে ৩ জন নিহত ও অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বড়বাড়ি স্মৃতিসৌধ এলাকার রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নিলুর খামাড় গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৪), রংপুর শহরের তাজহাট-শেখপাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাবু (২৯) ও ফারুক হোসেন শিয়াব (২৬)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সকালে রংপুর থেকে কুড়িগ্রামগামী যাত্রীবাহী লেগুনাটি (পিকআপ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড়বাড়ি বাজার সংলগ্ন স্মৃতিসৌধ প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে সেটি উল্টে যায়।

এতে ঘটনাস্থলেই চালক ও এক যাত্রী এবং লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে আরেক যাত্রীর মৃত্যু হয়।

আহত ৮ জনকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রাম সদর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করেছে।

সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম জানান, দুর্ঘটনাকবলিত লেগুনা জব্দ এবং লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নরসিংদী

নরসিংদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বুধবার দুপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

নরসিংদীর মাধবদী থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান ও শিবপুরের ইটাখোলা হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান জানান, দুপুরে মহাসড়কের মাধবদী এলাকায় ঢাকা থেকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়াগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে নরসিংদী থেকে গাউছিয়াগামী রংধনু পরিবহনের লোকাল বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মামুন নামে এক যাত্রী মারা যান। অপর যাত্রী আবদুর রাজ্জাককে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। এ ঘটনায় উভয় বাসের সাতজন আহত হন।

অন্যদিকে, একই সময়ে মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার ঘাষিরদিয়া এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস বিপরীত দিক থেকে আসা মাইক্রোবাসকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের এক যাত্রী মারা যান। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন।

ঈদুল ফিতরের বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের ভুইয়াগাঁতী, তবারিপাড়া ও ষোল মাইল এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা ফারুক (৪০) ও চন্দন (৩৮)। বাকিজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

রায়গঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার সেরাজুল ইসলাম জানান, দুপুরে ভুইয়াগাঁতী পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় একটি মিনি ট্রাকের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে মিনি ট্রাকের চালক ফারুক ও হেলপার চন্দন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনই মারা যান।

অন্যদিকে, সকালে একই মহাসড়কের তবারিপাড়া এলাকায় ঢাকাগামী ডিপজল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের হেলপারসহ সাতজন আহত হন।

খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর দুপুরের দিকে বাসের হেলপার মারা যান।

ওই দুর্ঘটনার আধ ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একই মহাসড়কের ষোলমাইল এলাকায় ঢাকাগামী আদর পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে সাত যাত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।