উদ্বোধনের আগেই আড়াই কোটি টাকার ব্রিজে ‘বিশাল ফাটল’

সিলেটের জৈন্তাপুরে এখনো উদ্বোধন হয়নি প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটির। উদ্বোধনের আরও এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই ব্রিজটির মূল পিলারে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ব্রিজের গার্ড ওয়াল বৃষ্টির কারণে পানিতে ভেসে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এলজিইডির বাস্তবায়নে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আইআরআইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় মুক্তাপুর (জৈন্তাপুর ইউপি হেডকোয়ার্টার) ঢুলটিরপাড় ২নং লক্ষ্মীপুর বাজার জিসি সড়কের ১ হাজার ৪৪০ মিটার চেইনেজ চিকারখালের ওপর ৫৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে কয়েকটি এলাকার সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম এটি।

কিন্তু ব্রিজটি উদ্বোধনের আগেই পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। কাদামিশ্রিত নিম্নমানের বালু-পাথর, সিমেন্ট ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ব্রিজের পাইলিংকাজ করার সময় স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না করা এবং শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করার কারণে এমন ঘটনা ঘটে। এছাড়া পূর্বের ব্রিজটিও নিচের পাইলিং না হওয়ায় ভেঙে পড়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, ব্রিজটির কারণে দীর্ঘদিন থেকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। মন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা ব্রিজটি পেয়েছিলাম, কিন্তু এলজিইডির জৈন্তাপুর সিলেটের খামখেয়ালিপনার কারণে আবারও ব্রিজটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে অনেকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের ঢালাই কাজের পূর্বে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কাজ করার সময় কোনো ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতি আমরা দেখতে পাইনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছেমতো ব্রিজের পাইলিং ৮০ ফুটের স্থলে কোনো কোনো পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীরে পাইলিং করে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে।

এলাকাবাসী বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানালেও বিষয়টি নিয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর জৈন্তাপুর। অথচ বৃষ্টির শুরুতেই ব্রিজটির গার্ড ওয়াল থেকে মাটি সরে গিয়ে পাইলিং পিলারের ফাটল বেরিয়ে আসে।

এলাকাবাসীর দাবি, পূর্ণ বর্ষা নামার পর ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চিকারখাল ব্রিজ নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ দ্রুত সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূরুল হক অ্যান্ড তৈয়বুর রহমান জেবির ঠিকাদার ব্রিজে ত্রুটির কথা স্বীকার করে জানান, এলজিইডির জৈন্তাপুর নির্দেশনা মোতাবেক পুরো কাজ হয়েছে। পাইলিং কাজের সময় পশ্চিম পাশে কয়েকটি পিলার ৩৫ থেকে ৪০ ফুটের মধ্যে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। পাইলিং যা গভীরে গেছে ততটুকুর বিল আমাকে দেয়া হবে। পূর্বপাশের মেইন ব্রিজের পাইলিংয়ের ওপর মূল ব্রিজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ক্যাপ স্থাপনের স্থানে ফাটলের বিষয়টি শুনেছি। নদীতে পানি থাকায় আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। এছাড়া ব্রিজের অন্য কাজ যথা নিয়মে হয়েছে।

এলজিইডির জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ বলেন, সঠিক নিয়মে কাজ হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পানির স্রোত বেশি হওয়ায় গার্ডার ভেঙে যায় এটি ব্রিজের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া পাইলিং পিলার ফাটলের বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

এলজিইডির জৈন্তাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি পাইলিংকাজ ৮০ ফুট সম্পন্ন করে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। ক্যাপে ফাটলের বিষয় তার জানা ছিল না।