উপজেলা নির্বাচনে ভোটার খরা কীভাবে দেখছে আ.লীগ?

একাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ এ রেকর্ড পরিমাণ ভোট গ্রহণ, দু’মাস পরে ফেব্রুয়ারিতে সেই ভোটারই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র উপনির্বাচনে ভোটের বুথ বিমুখ। উপ-নির্বাচন আর শুধুমাত্র নৌকার প্রার্থী বলে আগ্রহের কমতি থাকতেই পারে। আশা করা হয়েছিলো উপজেলায় দেখা যাবে ভোটারদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপস্থিতি। কিন্তু মাস পেরিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সেই একই চিত্র।খবর চ্যানেল আই’র।

উপজেলা নির্বাচনের ২দফাতে ভোটের দিনে দেখা মেলেনি ভোটারের সেই চিরচেনা দীর্ঘ লাইন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার খরা কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ?

জাতীয় নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় পরিসরে নির্বাচনী উৎসব উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ২১৬টি উপজেলা নির্বাচনে ভোটার অনুপস্থিতি ছিলো দৃষ্টিকটু। কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে সারাদিনেও একটি ভোট না পড়া- হয়েছে সংবাদ শিরোনাম। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসেছে ভোট গ্রহণে দায়িত্বরতদের দোলনায় দোল খেয়ে অলস সময় পার করার চিত্র।

এ পরিস্থিতি কাটাতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আগ থেকে নেওয়া পরিকল্পনা থাকলেও খুব একটা কাজে আসেনি। উপজেলা পর্যায়ে শুরুতে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়ন ফরম বিতরণ করে দলটি। পরবর্তীতে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ঘোষণা করে বাকি দুই পদ উন্মুক্ত করে দেয়। দলটির নীতিনির্ধারণী মহল ধারণা করেছিলো এতে করে হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। দলটির এমন সিদ্ধান্ত কিছুটা প্রভাব রাখলেও অনুষ্ঠেয় ২১৬টি উপজেলায় ৩৩ শতাংশ ভোট সে দাবিকে পেছনে ফেলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীনদের একাধিক নেতা ভোটারদের ভোট প্রদানে এমন অনাগ্রহে অস্বস্তির কথা প্রকাশ করেছেন। যদিও পরক্ষণেই তাদের দাবি বড় দলগুলোর বর্জননীতি ভোটারদের ভোটকেন্দ্র বিমুখ করেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টিআকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন: বড় দলগুলো যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ভোটারদের অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে মানুষ তো আগ্রহ হারাবেই। আমি বিএনপিকে বলবো আপনার বর্জনের নীতি থেকে ফিরে আসুন। তা না হলে আপনার মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবেন। আওয়ামী লীগ কখনই বিরোধীদল ছাড়া বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে না। আপনারা যদি এখনই ফিরে না আসেন আপনাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

ভোটার অনুপস্থিতি কমের কারণ হিসেবে সরকারের সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন: অনেক জায়গায় কে নির্বাচিত হচ্ছেন তা আগে থেকে জনগণ বুঝতে পারছে। খেলায় যদি উত্তেজনা না থাকে আমি-আপনি কেন কেউ সেটা দেখবে না৷

এমন পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে ফিরে এসে মাঠের রাজনীতিতে অবস্থান গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি। এছাড়াও অংশ নিচ্ছে না সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।

এ বিষয়ে কথা হয় দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন: বিএনপির এমন বর্জনের রাজনীতি দেশের গণতন্ত্রকে কলুষিত করছে। সেনা শাসকের হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপি গণতন্ত্রে কখনোই বিশ্বাস করেনি। এখন তারা জনগণের কাছে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এতে করে তারা জনগণের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। পাশাপাশি, নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস চালাচ্ছে।

তিনি আরও দাবি করেন: তারা যদি গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে ফিরে না আসে, একটা সময় মুসলিম লীগের মতো তারাও বিলীন হয়ে যাবে।

পাশাপাশি সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়ন ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন: দেশ যতো উন্নত হবে, মানুষ তত ব্যস্ত হয়ে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনের বাইরে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে তারা খুব একটা আগ্রহ দেখাবে না। ইউরোপের দেশগুলোর দিকে আমরা তাকালে দেখতে পাই, সময় বাড়িয়ে অনলাইনে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে না।

আগামীতে উন্নয়ন ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব রাখবে বলে দাবি করেন রাজ্জাক।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। মেয়র নির্বাচিত হন আতিকুল ইসলাম। আর গতবছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮০ শতাংশের বেশি। ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো বয়কট করছে বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি অংশ নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোট মহাজোটের শরীকরাও।