ঘরে বসেই দেশজুড়ে

একজন গৃহিনীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প.. আত্মবিশ্বাস আর উদ্যোগ-ই পুঁজি

পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তাইতো শূন্য হাতে শুরু করে এখন সফল উদ্যোক্তা তিনি।

শুধু টাকার পুঁজি নয় বরং উদ্যোগ আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে উঠে দাঁড়াতে হয়। সাফল্য তাদের কাছেই ধরা দেয় যারা থেমে গিয়েও পথের শেষ দেখতে এগিয়ে যায়। তেমনি একজন অনলাইন ভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী “প্রকৃতির উপহার” এর স্বত্বাধিকারী সুভা মনি।

সুভা মনি যশোর জেলার, শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি একজন মা, স্ত্রী তথা পরিপূর্ণ গৃহিনী। একই সাথে চলছে তার উচ্চ শিক্ষাও, অর্থাৎ তিনি ছাত্রীও। তবু তিনি বসে নেই, সাংসারিক আর পড়ালেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেকে প্রতিয়মান করেছেন একজন সফল উদ্যোক্ত হিসেবে, অন্যদের দৃষ্টান্ত হিসেবে। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাতে কী? ঘরে শুধু অলস বসে না থেকে ঘরে থেকেই ব্যবসা করলেন দেশজুড়ে।

বিশ্বাস, পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও সাহসীকতার স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় পথচলা। নানা বাধা আসে চলার পথে। পথ চলতে গিয়ে থেমে যাওয়া মানে তো সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। তাইতো তিনি সামান্য আর্থিক পুঁজি আর নিজের মনোবল নিয়ে শুরু করেন অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় ব্যবসা। শুরুর পর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে ‘প্রাকৃতিক’ নানান পণ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে অর্ডার দেয়া ভোক্তাদের কাছে কুরিয়ার ও অন্যান্য মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি। খাঁটি পণ্য ক্রয় করে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার পুরোটা প্রক্রিয়ায় রাখছেন সামান্য লভ্যাংশ। সেই সামান্য লভ্যাংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণার মতো একত্রিত হয়ে স্তুপাকারে পরিণত হচ্ছে। পরিণত হয়েছেন সফল ব্যবসায়ীতে, সফল উদ্যোক্তায়। নারী যে পারে সেটা তিনি আবারো প্রমাণ করলেন।

পণ্যের সাথে দায়িত্ববোধ ও সেবা’কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুভা মনি অনলাইন মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন নানান পণ্য। গুনগত মান নিশ্চিত করে ‘প্রাকৃ্তিক’ এসকল পণ্য সহজেই পৌছে দিচ্ছেন অর্ডারকারীদের হাতে। মূলত ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যে কেউ অর্ডার করতে পারেন ওই সকল পণ্য।
প্রকৃতির উপহারের সেবাসমূহের মধ্যে আছে- সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু, খাঁটি নারিকেল তেল, কাঠের ঘানি ভাঙানো সরিষার তেল, খাঁটি গাওয়া ঘি, গরুর ঘানি ভাঙানো সরিষার তেল, পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়, ভাড়েঁর গুড় ইত্যাদি। সাথে সংযুক্ত হয় সময়োপযোগী ও মৌসুমী অন্যান্য পণ্যও।

সুভা মনি বর্তমানে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছোটবেলার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে দেশ ও দশের সেবা করবে। যদিও সে স্বপ্নের পিছু ছুটে মাঝপথে স্বপ্নটাকে হারিয়ে ফেলেছেন। অষ্টম শ্রেণির পর বরিশাল থেকে পড়াশুনার জন্য ঢাকায় আসা।
তখনও চোখে স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। তারপর হঠাৎ করে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের তরিকুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

স্বামীর ব্যবসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার মনোভাব তৈরি হয়েছিলো সুভা মনির। এরপর থেকে এইচএসসি শেষ করে বর্তমানে অনার্স ফাইনাল ইয়ার চলছে।

সুভা মনি জানান, ‘ব্যবসার পাশাপাশি সংসার, পড়াশোনার ও বাচ্চা দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। তবে ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি।’

‘চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারী-ই ব্যবসা বা সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন তার মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি ও চোখের এক কোনায় আনন্দ অশ্রু ছিলো।

তিনি জানান, ‘তার জীবনের নানা প্রতিকূলতাকে এক পাশে রেখে, নিজের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে সবকিছুর পরেও আমার স্বামীর সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে কখনোই যতটুকু এসেছি তাও আসা সম্ভব হতো না। আমার এই কাজে তার সর্বোচ্চ সহযোগিতা ছিলো এবং আছে।’

আগামির উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শে তিনি জানান, ‘চোখে স্বপ্ন থাকতে হবে, সেই স্বপ্ন পুরণের জন্য লেগে থাকতে হবে কাজে। আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি তা হচ্ছে জানতে হবে, শিখতে হবে, শেখার শেষ নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষকে অন্ধ বিশ্বাসও করা যাবে না। যাকে বিশ্বাস করে দায়-দায়িত্ব দিতে হবে তার সম্পর্কে ভালভাবে খোঁজখবর করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে কৌশলী হয়ে। বুদ্ধিমানের মত খাটতে হবে। সততার সাথে বিপদ মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহর কাছে সবসময় আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। সফলতার জন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে। হাসিমুখে সবসময় ভাল ব্যবহার করতে হবে ও আল্লাহ উপর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পথে অবিচল থাকতে হবে, যেকোন পরিস্থিতির জন্য মানুসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে খারাপ কিছু হলেও মানুসিক ধকলটা কম আসবে, আর নতুন ভাবে শুরু করার উদ্যমটা থাকবে।’

সুভা মনি বলেন, ‘মানুষকে সেবা করার ইচ্ছে ছিলো, তাই সেই কাজটা আমি আমার খাঁটি পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে পণ্য সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। মানুষকে সেবা প্রদান করার লক্ষ্য নিয়ে কাজে নেমেছি।’

উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যাদের দ্বারা আপনি আপনার উদ্যোক্তা জীবন সফল হয়েছেন, তাদের কে মনেপ্রাণে ভালোবাসুন সম্মান করুন ও চাহিদার থেকে বেশি তাদেরকে সহযোগিতা করুন। তাহলে দেশ ও দেশের ঐতিহ্য টিকে থাকবে।’

তাইতো “প্রকৃতির উপহার” এর স্লোগান “পণ্য সেবাই আমাদের মূল লক্ষ্য”

পেইজ লিংকঃ https://www.facebook.com/prokitir.upohar/