একটি মৃত্যুর খবরে দুইজনই শেষ গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া

একটি মৃত্যুর খবরে দুইজনই শেষ গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া! তথা ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মাও শেষ! ঘটনার আগে ছেলে ঈদের নামাজ পড়তে বের হন বাড়ি থেকে। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন স্কুলছাত্র হাসিব মোল্যা (১৮)।অতঃপর ঈদের একদিন পর হাসিবের লাশ মিলে একটি খালের মধ্যে।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৯ টার দিকে খালের মধ্যে থেকে হাসিবের লাশ উদ্ধার করেন।

তবে, এর আগে ছেলের নিখোঁজ ও লাশের খবরে ওইদিন সন্ধ্যায় হাসিবের মা হেলেনা বেগমও (৪৫) নিজ বাড়িতে ওপারে পাড়ি জমান।
অর্থ্যাৎ ছেলের মৃত্যুর খবরে মা ও হলেন লাশ।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে হাসিবের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

হাসিব মোল্যা পূর্ব সদরদীর বাস্তখোলা এলাকার ফরহাদ হোসেন মোল্যার ছেলে। তবে, হাসিবের পরিবার জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া নামক এলাকায় বসবাস করে আসছেন।বাবা ফরহাদ হোসেন ডেমরা এলাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। হাসিব ডেমরা এলাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন।

স্কুলছাত্র হাসিব মোল্যার পরিবার জানান, ‘হাসিব মোল্যা গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে ডেমরার সারুলিয়ার বাসা থেকে ঈদের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হন।

এরপর সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও হাসিবের আর সন্ধান মিলেনি। পরদিন শনিবার (১২ এপ্রিল), সন্ধ্যায় পুত্র শোকে মারা যান মা।

অতঃপর ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরার একটি খালের মধ্যে থেকে ভাসমান হাসিবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে ছেলের লাশ উদ্ধার, অন্যদিকে মায়ের মৃত্যুর খবরে হাসিবের পুরো পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

শোক নেমেছে হাসিবের গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার সদরদীতেও। সেখানে হাসিবের স্বজনদের কান্না না থামতেই হাসিবের মায়ের মৃত্যু কান্না পুরো এলাকাটিকে পুরো ঈদের আনন্দ কে নিথরে পরিনত হলো পুরো গ্রামবাসী কে।

হাসিবের মেজ কাকা মো. বিপ্লব মোল্যা এই প্রতিবেদককে কে জানান, ‘হাসিবকে তার বন্ধুরা ডেকে নিয়ে হত্যা করে খালের মধ্যে ফেলে রেখে দিয়েছেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।’

হাসিবের দাদী লিলি বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাসিবরা গ্রামের বাড়ি রেখে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় বসবাস করছেন।হাসিবরা তিন বোন ও এক ভাই। হাসিব একমাত্র পুত্র সন্তান, তাইতো হাসিবের মৃত্যুর খবরে পরিবারের সবাই হতাশ! এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, এ হত্যার বিচার চাচ্ছি।’

এদিকে পুলিশ বলছে, ‘হাসিবরা তিন বন্ধু মিলে মদ খেতে একসাথে বের হন। পরে রাতে একটি বাড়িতে মদ পানও করে তারা। অতঃপর রাতেই হাসিব সেই বাড়ি থেকে বের হন। হেঁটে একটি রাস্তা দিয়ে আসার সময় হাসিব একটি ব্রিজের উপর বসলে হয়তো ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন তিনি।’

এব্যাপারে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার ডেমরার একটি খাল থেকে হাসিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পেয়েছি। সেখানে দেখা গিয়েছে হাসিবসহ তিন বন্ধু মিলে মদ নিয়ে ঘুরছেন।

পরে, একটি বাড়িতে গিয়ে তিন বন্ধু মিলে মদ পান করেন তারা। অতঃপর ওই রাতেই কাউকে না বলেই হাসিব বাড়িটি থেকে বের হন।

রাস্তা দিয়ে হেঁটে একটি ব্রিজে বসেন। সেখান থেকে খালের পানিতে পড়ে হাসিবের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

ওসি বলেন, ‘আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।

আপাতত থানাতে একটি অপমৃত্যু মামলা (ইউডি) দায়ের করা হয়েছে। প্রয়োজনে রিপোর্ট সাপেক্ষে এটাকে হত্যা মামলায় রুপান্তর করা হবে।