এখনও রোহিঙ্গা নিধন অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমার

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখনও রোহিঙ্গা নিধন অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ক্ষুধা, জোরপূর্বক অপহরণের ভয়, সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও ধর্ষণের ভীতি প্রদর্শন করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম তাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের জীবন দুঃসহ করে তুলতে নির্বিচারে নিপীড়ন, অপহরণ ও পরিকল্পিত উপায়ে ক্ষুধার্ত রাখছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে না পেরে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয় সে লক্ষ্যেই এমন উপায় বেছে নিয়েছে দেশটি।

বুধবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযান এখনও অব্যাহত আছে। গত আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া সহিংস এ অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, বাংলাদেশে পালানোর পথে তল্লাশি চৌকিগুলোতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে। নারী ও তরুণীদের গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।

এদিকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে পালানোর প্রধান কারণ হিসেবে খাদ্য সংকটের কথা বলছে। রাখাইনের বুথিডংয়ের পাশের একটি গ্রামের ৩০ বছর বয়সী বাসিন্দা দিলদার বেগম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, ‘আমরা খাবার পাচ্ছিলাম না। আর এ কারণেই আমরা পালিয়েছি।’

অ্যামনেস্টি বলছে, রোহিঙ্গাদের ধান ক্ষেতে, বাজারে যেতে বাধা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এমনকি মানবিক ত্রাণ তৎপরতাও চালাতে দিচ্ছে না। যে কারণে সেখানে বড় ধরনের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন এমন ১১ রোহিঙ্গা পুরুষ ও আট নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে লন্ডনের এ মানবাধিকার সংস্থা।

এদিকে আগস্টে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানামার সেনাবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির তৈরি প্রতিবেদনের শুনানি হবে নিরাপত্তা পরিষদে। এক কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আট দেশের আহ্বানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভাগ্য নিয়ে আলোচনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হচ্ছে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমর্থন দিয়েছে সুইডেন, পোল্যান্ড, নেদ্যারল্যান্ডস, কাজাখস্তান ও নিরক্ষীয় গিনি।