এরশাদের মৃত্যুর পর কবর কোথায় হবে, সিদ্ধান্তহীনতায় জাপা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর কবরস্থান কোথায় হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি দলটির শীর্ষ নেতারা। বুধবার (৩ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের এ যৌথসভা চলে আড়াই ঘণ্টা। সভায় এরশাদের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ও এরশাদের কবরস্থান কোথায় হবে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

জানা যায়, দেশের বাইরে থেকে ভালো চিকিৎসক আনা যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়। সভায় এরশাদের কবরস্থানের জায়গা কেনার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ। তবে এরশাদের কবরস্থান কোথায় হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এতে জাপার ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা ১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘এরশাদের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আজ সকালে আমি সিএমএইচে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কণ্ঠ শুনে চোখ ও হাত নাড়িয়েছেন।’

জাপার যৌথসভার বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় শুরুতেই জিএম কাদের এরশাদের কথা বলতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতা এরশাদের কবরস্থান নিজস্ব কেনা জায়গায় পাবলিক প্লেসে করার পক্ষে মত দেন। তবে কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেন, এরশাদ সেনানিবাস অথবা আসাদগেটের বিপরীতে সংসদ প্রাঙ্গণে তার কবরের কথা বলেছেন। কয়েক নেতা এর বিরোধিতা করে বলেন, ‘এরশাদ দেশের সতের কোটি মানুষের নেতা। তার কবরস্থান যদি সেনানিবাসে হয় তাহলে সাধারণ মানুষ তার কবরস্থান জিয়ারত করতে যেতে পারবে না।‘

সভা সূত্র জানায়, সভায় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সফিকুল ইসলাম সেন্টু মোহাম্মদপুরের আদাবরে জায়গা কিনে কবরস্থান কেনার প্রস্তাব দেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আদাবরে না পাওয়া গেলে সাভারে আমার নিজস্ব জায়গা থেকে দুই বিঘা জায়গা এরশাদের কবরস্থানের জন্য লিখে দেব।’

এরপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ পাবলিক প্লেসে এরশাদের কবরস্থান করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নেতা এরশাদের কবরস্থানের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে পাঁচ কোটি টাকা দেব। স্যারকে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে নেয়া হয়, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় খরচও আমি বহন করব।’

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এম এ সাত্তার, সাহিদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, আজম খান প্রমুখ।

সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এরশাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি মূলত মাইলিড প্লাস্টিক সিনডম রোগে আক্রান্ত।’

যৌথ সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া হবে। এরশাদ বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে উপস্থিত সদস্যরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পার্টি চেয়ারম্যান দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।

মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সিএমএইচের চিকিৎসকরা সিঙ্গাপুর অথবা অন্য কোনো দেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজন হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পল্লীবন্ধুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। অথবা বিদেশ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসা হবে। সব কিছুই সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী হবে।

সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানান জাতীয় পার্টি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা সারাদেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার সারাদেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোগমুক্তি এবং সুস্থতা কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে প্রতিদিন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন বলে জানান জাপা মহাসচিব। এ সময় অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য এড়িয়ে চলতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের প্রশ্নে কোনো বিভ্রান্তি বা বিভেদ নেই। কোনো মতানৈক্য নেই। জাতীয় পার্টির সবাই একই সুতায় ঐক্যবদ্ধ আছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা প্রতিদিন জানানোর জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব।