কনডমে বাঁচবে নতুন মায়ের জীবন

সন্তান জন্ম দেয়ার আগে সচেতন অনেকেই প্রয়োজনীয় রক্তের খোঁজ রাখেন। কোনো ভাবেই অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে নিজের স্বজনের মৃত্যু এড়াতেই এতো সতর্কতা।

সন্তান জন্ম দেয়ার পর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। আর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একই কারণে মাতৃ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।

তাই বলে কি এর সমাধান নেই। অনেকে মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এমন এক পদ্ধতিতে নতুন মায়ের জীবন বাঁচানো সম্ভব তা হয়তো বেশিরভাগ লোকজনের কল্পনাতেই আসেনি।

কনডম সম্বলিত চারশ পাঁচ টাকা মূল্যের একটি কিট পারে নতুন মায়ের মৃত্যু ঠেকাতে। আর এই সস্তা কিটটিতে রয়েছে একটি কনডম, একটি ক্যাথেটার বা মূত্র নিষ্কাশনযন্ত্র এবং একটি সিরিঞ্জ। সরঞ্জাম তিনটি ব্যবহার করেই নতুন মায়ের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় ও সন্তান জন্মদানের সময় ব্যাপক রক্ত ক্ষরণের কারণে বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন মায়ের মৃত্যু ঘটে। যার সমাধান হল ‘ইউবিটি কিট। কিন্তু এর জন্য ৩২ হাজার চারশ টাকা খরচ করতে হয়। উন্নয়নশীল দেশের অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্যই এটা ব্যয়বহুল।

কিন্তু ব্যয়বহুল এই পদ্ধতির স্বল্পমূল্যের সংস্করণ হল ‘ইএসএম ইউবিটি কিট’। যা চারশ পাঁচ টাকাতেই কেনা যাচ্ছে। আফ্রিকাজুড়ে রক্ত ক্ষরণ হওয়া নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে এই কিট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ধাত্রীদের।

আ-আন মুলিঙ্গে কেনিয়ার নাইরোবির একজন ধাত্রী। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা কয়েকজন মায়ের জীবন বাঁচিয়েছি। সন্তান জন্মদানের সময় কোনো নারীর যখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তখন আমরা এটা ব্যবহারের পরই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, একটা কনডমের মধ্যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে কনডমের মুখের কাছের অংশটি বেঁধে ফেলি এবং কনডমটি হাত দিয়ে জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে দিই।

এরপর সিরিঞ্জ দিয়ে ক্যাথেটারে ভেতরে স্যালাইন ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিই কনডমটি। এটি ফুলে ওঠায় জরায়ুর মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ থেমে যায় বলেও জানান তিনি।

তিনি গত বছর এ ব্যাপারে ভাল অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, সন্তান জন্ম দেয়ার পর এক নারীর গর্ভফুল অপসারিত হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্ত অবিরত পানির মতো গড়িয়ে পড়তে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ইএসএম-ইউবিটি কিট ব্যবহারের কথা তখনই মাথায় আসে। আমি জরায়ুতে কনডম ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রক্তক্ষরণের মাত্রা কমে যায়। ওই নারী সুস্থ হয়ে সন্তানসহ বাড়ি ফেরেন। এই কিট দিয়ে চিকিৎসায় সফলতার হার অনেক; বিভিন্ন পরীক্ষায় তেমনটাই দেখা গেছে।

https://youtu.be/D1Zmhc828AU