কুবির হলে শিক্ষার্থীর হলুদ বরণ

কুবির শেখ হাসিনা হলের চেহারা বাইরে থেকে আর অন্য দশটি দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। তবে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে গেইম কক্ষে যেতেই চোখে পড়ে রুমের একটি দেয়ালের সামনে বিছানার চাদর বসিয়ে ঝোলানো হলুদ-গোলাপী পর্দা, রঙ মিলিয়ে বেলুন, টিমটিমে আলোয় জ্বলছে মরিচবাঁতি।

সামনে রাখা কয়েক জাতের ফল আর একটা থালায় সাজিয়ে রাখা বাঁটা হলুদ ও দূর্বাঘাস। হলদে শাড়িতে একদল তরুণীর ভীড়৷ পেছনের ব্যানারে লেখা ‘লিলির হলুদ সন্ধ্যা’। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত হলুদের মতোই নাঁচ-গানে পুরো আয়োজন করেছেন এই হলের শিক্ষার্থীরা, তাদের সহপাঠী লিলিকে বরণ করা জন্যে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নবনির্মিত শেখ হাসিনা হলের গেইম কক্ষে বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুন নাহার লিলির বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এ আয়োজনে অংশ নেন তাঁর বন্ধুবান্ধব ও হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। তাঁর পরিবার থেকে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছোট বোনেরা।

তবে এই গায়ে হলুদের আয়োজন ছিল খুবই সাদামাটা। অন্য দশটি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানসূচির মতোই স্বাভাবিক। লিলির হাত একে একে রঙিন হচ্ছিলো বান্ধবীদের দেওয়া হলুদে। দলবেঁধে সবাই গাইছিলেন গান, একপর্যায়ে চির প্রচলিত বিয়েবাড়ির গান লীলাবালির তালে কনেকে ঘিরে চলে নাঁচ৷

জানা যায়, নাইমুন নাহার লিলি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্নাতক ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। লিলির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের হাতিয়ামুড়ি। যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হচ্ছে তিনি একই উপজেলার সৌদি প্রবাসী মাকসুদুর রহমান। আগামী শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) পারিবারিকভাবে ধর্মীয় রীতি অনুসারে নিজ বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।

হলে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সদ্য বিয়ের পীড়িতে বসতে যাওয়া লিলি আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, হুট করেই ফ্যামিলিগতভাবে বিয়ে ঠিক হয় তাঁর। সল্প সময়ের প্রস্তুতির কারণে বাড়িতে খুব ছোট পরিসরেই অনুষ্ঠান হবে বলে ঠিক হয়েছিলো৷ কিন্তু, লিলির সবসময়ই স্বপ্ন ছিলো তাঁর বিয়েটা হবে এমন পরিসরে যেখানে বন্ধু-বান্ধব, ক্লাসমেট সবাই উপস্থিত থাকবে৷

তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতির কারণে আমার মনে হয়েছিলো আমার এ স্বপ্নটা মনে হয় পূরণ হবে না। তখন আমার রুমমেট কানিজ আপু বললো যে আমরা হলেই তোর হলুদটা দিয়ে দেই। তোর বিয়েতে ফ্রেন্ড এবং ক্যাম্পাসের সবাইকে দাওয়াত দেয়ার ব্যাবস্থা করি তাহলে। পরে আমার বাকি রুমমেট বুশরা, পারভীনরা মিলে এ উদ্যোগটা নেয়। তারপর আমরা আমাদের সিনিয়র আপুদের জানাই৷ আপুরা এতোটা আদর-ভালোবাসা দিয়ে এ আবদারটা পূরণ করে নিবে আমি আসলেই ভাবিনি।

হলের মধ্যে এমন ভিন্নরকম গায়ে হলুদ উদযাপন নিয়ে লিলির রুমমেট পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা সুমি বলেন, আমরা আয়োজন করার আগে ভাবিনি আসলে যে এটাতে এতো সাড়া পাবো৷ প্রথমে ভেবেছিলাম যে আমরা রুমের সবাই মিলেই ওর হলুদ করবো। পরে যখন হলের আপুদের জানালাম তারা বললো যে তারা যথাসম্ভব সাপোর্ট করবে অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য, আমরা যাতে প্রোগ্রামটা করি এবং হলের সবাইকেই দাওয়াত দিয়ে করি৷ তারপর একদিনের মাঝেই সকল প্রস্তুতি নেওয়া হলো৷ অন্য হল থেকে, মেস থেকে মেয়েরা এবং লিলির বন্ধুরা সকলেই এসেছে বলে জানান তিনি৷