কোন শর্তে যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে হামাস?

টানা ১১ দিন রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। শান্তির সুবাতাস বইছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলটিতে।

গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস মিসরের মধ্যস্থতায় এই অস্ত্রবিরতি মেনে নিয়েছে কিছু শর্তে। ওইসব শর্ত লংঘন হলে আবারও রকেট হামলা চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হামাস। সংগঠনটি বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তেল আবিব এটি মেনে চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও তা বাস্তবায়ন করবে।

কী সেই শর্ত

হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু গাজায় সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ইসরাইল দিয়েছে তা যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে তেল আবিব চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে।

এই শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে হামাস মূলত বোঝাতে চেয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সংঘর্ষে তারা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এবং ইসরাইল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি মেনে নেয়। ওই মন্ত্রিসভা বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ‘মিসরীয় প্রস্তাব’ মেনে নিয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভার গতরাতের ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশনকে বলেছেন, প্রতিরোধ আন্দোলন মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে এই নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে, গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ হবে।

ওসামা হামদান বৃহস্পতিবার রাতে আরও বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শহরের শেখ জাররাহ এলাকা এবং আল-আকসা মসজিদ থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারও আমরা (মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে) নিশ্চয়তা পেয়েছি।

ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের বিজয় বলেও জানিয়েছেন ওসামা হামদান। তিনি বলেন, ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিজয় সুনিশ্চিত হয়েছে।

হামাস নেতারা এও বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।

অস্ত্রবিরতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন সরকার। গত ১১ দিনের হামলা চলাকালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ভূমিকা অনেকটাই গুরুত্বহীন ছিল। হামাস ফাতাহ দ্বন্দ্বে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ক্ষমতাসীন ফাতাহ দলের নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেন, ‘মিসরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শক্তির যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সাফল্যকে আমরা স্বাগত জানাই।’

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, এবারের ১১ দিনের সংঘর্ষ ২৩২ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; এদের মধ্যে আছে ৬৫টি শিশুও। ইসরাইলি কামানের গোলা ও বিমান হামলায় আহতও হয়েছে দুই হাজারের কাছাকাছি।