কোরবানির অবিক্রিত গরু নিয়ে হতাশ চুয়াডাঙ্গার খামারীরা

প্রতি বছরেই সন্তা‌নের মত গরু ছাগল লালন পালন ক‌রে থা‌কে মৌসুমী ব্যবসায়ীসহ চুয়াডাঙ্গার খামারীরা। তা‌দের মূল উদ্দেশ্যই থাকে কোরবানী‌কে ঘি‌রে। ঠিক এবারও একইভাবে র‌ঙিন স্ব‌প্ন দে‌খে‌ছিল প্রা‌ন্তিক খামারীরা। গো-খা‌দ্যের মালামালের দাম আগের তুলনায় এবার বে‌শি দাম হওয়া স‌ত্তেও বি‌ভিন্ন এন‌জিও থে‌কে ঋণ নেয় ওই সকল খামারীরা। তবে তাদের কা‌ক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণে কোরবানির জন্য গত এক বছর ধ‌রে প্রস্তুত করা হ‌য়ে‌ছিল এক লা‌খেরও অ‌ধিক গরু ছাগল ভেড়া।

যেসব গরু ছাগল চুয়াডাঙ্গার ডুগডু‌গি, শিয়ালমারী ও আমডাঙ্গার হাটসহ বি‌ভিন্ন পশু হা‌টে বি‌ক্রির উদ্দে‌শ্যে হা‌টে জ‌ড়ো হ‌য়ে‌ছিল খামারীরা। গত বা‌রের তুলনায় এবার পশুর দামও ছিলো কিছুটা চড়া। ত‌বে এবার অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় ক্রেতা‌দের কাছে চাহিদা মত দা‌মে পশু বি‌ক্রি কর‌তে পা‌রে‌নি বিক্রেতারা।

চুয়াডাঙ্গার বি‌ভিন্ন হাটে ছোট মাঝারী গরু বিক্রি হ‌লেও বড় বড় গরু তেমন একটা বি‌ক্রি কর‌তে পা‌রে‌নি কোরবানী দেয়া ক্রেতা‌দের কাছে। চুয়াডাঙ্গার বি‌ভিন্ন হাটের গ‌ন্ডি পে‌রি‌য়ে তা‌দের চাহিদা মত দাম পেতে অ‌নেক খামারী ঢাকাসহ বি‌ভিন্ন জেলায় গরু নি‌য়ে গেলেও আশান‌রূপ দাম না পে‌য়ে লা‌লিত স্বপ্ন আর সম্পূর্ণ পূরণ কর‌তে পা‌রে‌নি স্বপ্ন বিলাসী অনেক খামারীরা।

ঢাকাসহ বি‌ভিন্ন অঞ্চল থে‌কে সেসব গরু দূরন্ত পথে আসা-যাওয়ার বাড়তি খরচ করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে খামারীদের। যে লাভের আশায় বাইরে গিয়েছিল সে আশাও পন্ড হয়েছে তাদের। এখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ তৈরী হয়েছে। এমনিতেই ঋণ ধার করে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করে এবারই কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব তো হয়নি বরং কীভাবে ঋণ ধার শোধ করবে এমন চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার খামারীরা।

আবার সেসব অবিক্রিত পশু আবারও এক বছর পর্যন্ত লালন পালন করে গড়ে তোলাও তাদের কাছে এখন দুঃসাধ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আবার অনেকে লালন পালন করতে পারলেও আগামীতেও লাভ হবে না বলে মনে করছে অনেক খামারীরা।

এদিকে, এবারই গো-খাদ্যের দাম বেশি, আগামীতে আরো বাড়বে। এতে করে ছোট মাঝারি খামারিদের করপোরেট ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা বড় ডেইরি খামারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের অবিক্রিত গরু নিয়ে টিকে থাকাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে মহা হতাশার ছাপ পড়েছে চুয়াডাঙ্গার পশু খামারীদের মধ্যে।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গার খামারি বদর উদ্দীন বলেন, আমি ঢাকার গাবতলি গরুর হাটে ১৯টি গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১৭টি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকী ২টি বড় গরু বিক্রি করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিলো। তখন বিক্রি করেননি। তবে এখন মনে হচ্ছে বিক্রি না করেই ভুল করেছি। পরে আর কোনো ক্রেতা মেলেনি। পরে বাধ্য হয়েই ২টি গরু ফেরত আনতে হয়েছে বাড়ীতে। এমন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন বদর উদ্দীনের মতো অনেকেই।

আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের মাজহাদ গ্রামের খামারি হাজ্জাজ বিন তাহাজ বলেন, পবিত্র ঈদুল আজাহা-ই একমাত্র গরু বিক্রির বিশাল সিজেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে লাভের আশায় সন্তানের মত লালন পালন করা গরুগুলো নিয়ে তিনি ঢাকায় ১৭টি গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। মাত্র ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে। ১০টি গরু ফেরত আনতে হয়েছে আমার। তিনি বলেন, এ কুরবানিতে তার প্রচুর লোকসান হয়েছে। যে গরুগুলো বিক্রি হয়েছে সেসব গরুর দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মণিরামপুর গ্রামের খামারি মাহফুজ বলেন, আমার খামারে ৬টি বড় গরু ছিলো। যে গরুগুলোর দাম ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। আশানুরুপ দাম না ওঠায় তিনি গরুগুলো বিক্রি করতে পারেননি। আগামী ঈদ পর্যন্ত লালন পালন করলেও লাভ হবে না গরু বিক্রিতে।

আর এক খামারি মকবুল হোসেন ৩১টি গরু নিয়ে ঢাকার আফতাবনগর হাটে গিয়েছিলেন। ঈদের আগের দিন ৭টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। চাহিদামূলক দাম না পাওয়ায় অবিক্রিত ২৪টি গরু তিনি বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।