খালেদার দেশে ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশায় নেতাকর্মীরা

চিকিৎসার জন্য প্রায় আড়াই মাস যাবত লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে অবস্থানকালীন দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি। নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সব মহলে এখন একটাই প্রশ্ন ‘কবে ফিরবেন খালেদা জিয়া’।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েই খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন। একমাত্র ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শেই এখনও পূর্ণ বিশ্রামে আছেন তিনি। তবে আগামী মাসেই (অক্টোবর) তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি, কবে ফিরবেন খালেদা।

গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও রাজনীতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে অবস্থানকালে বেশ কয়েকটি বৈঠকের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও নানা আলাপ আলোচনা রয়েছে।

তবে লন্ডন যাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে বিমানের টিকিট বুকিং দিয়েও না আসায় দলের নেতাকর্মীদের একাংশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন এ বিষয়ে মধ্যম সারির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরাও কিছু জানেন না।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বিএনপির এই নীতি নির্ধারকের মতো দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে অন্ধকারে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লন্ডন বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে একান্ত বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্যও হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহলে কূটনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যেসব নেতার ওপর আস্থা রাখেন, তাদের সবার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তারেক রহমান।

এ ছাড়াও মা-ছেলের বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্যপদ, মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি গঠন, সহায়ক সরকার পরবর্তী আন্দোলন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের কৌশলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

বিএনপির গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে আসবেন। তার আগেই দেশে ফিরে আসার চিন্তা ভাবনা করছেন তিনি। সফরকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠক হতে পারে।

খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে ১৫ আগস্ট নিজের ৭২তম জন্মদিন, ১ সেপ্টেম্বর দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। কিন্তু তিনি সেখানে ব্যক্তিগত, দলীয় ও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেই অংশ নেননি। এবারই প্রথম নিজেকে আড়াল করে পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন তিনি।

এ ছাড়াও ঈদ পুনর্মিলনী ও ঈদুল আজহার পর ১২ সেপ্টেম্বর লন্ডনে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল বেগম জিয়ার। কিন্তু তিনি কোনো অনুষ্ঠানেই অংশ নেননি। তার এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।

এ দিকে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে লন্ডনে থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সব দেশের রাষ্ট্রদূত, ইসলামি সম্মেলন সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সব দেশের কূটনীতিককে চিঠি দিয়েছেন।

এতে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাদের বর্বরোচিত গণহত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার দাবি এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য ম্যাডামের চিকিৎসা। বর্তমানে তা প্রায় শেষের দিকে। তিনি চলে আসবেন। পরিবারের সদস্যরা যেহেতু দেশে থাকতে পারছে না, তাই তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোও তার বর্তমান লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন সহসাই চলে আসবেন মন্তব্য করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, পৃথিবী তো এখন অনেক ছোট, ডিজিটাল যুগ। সবার সঙ্গে সবার পারস্পরিক কথাবার্তা, যোগাযোগ রয়েছে। খালেদা জিয়া না থাকলেও তার পরামর্শেই দল পরিচালিত হচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর একান্তই ব্যক্তিগত এবং তার শারীরিক অসুস্থতাজনিত দাবি করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর বাইরে আর কিছু নেই।

খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের কার্যক্রম প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে যখন যে বিষয়ে প্রয়োজন, সে বিষয়ে মহাসচিব কথা বলছেন। এ ছাড়া আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। দলীয় কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে।