গাজীপুরে এবার কাজে লাগেনি ‘জাহাঙ্গীর ম্যাজিক’,

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় এবার আলোচনায় ছিল গাজীপুর। রাজপথের বিরোধী দলবিহীন নিরুত্তাপ এই ভোটেও রাজধানীর পাশের এই জেলায় নির্বাচনের আমেজ ছিল জনগণের মধ্যে।

এর মূল কারণ—জেলার ৫টি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিপক্ষে মাঠে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যে তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন ও মাঠে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছিলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো এবার ‘জাহাঙ্গীর ম্যাজিক’ শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি। এ নিয়ে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছে তার সমর্থকদের মধ্যে। অন্যদিকে প্রত্যাশিত ফল পেয়ে চাঙা নৌকা শিবির।

গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। একটি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

গাজীপুর-১ আসনে হেট্রিক জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনে টানা পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনে প্রথমবারের মতো জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রার্থী রুমানা আলী টুসি, গাজীপুর-৪ আসনে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। তারা চারজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

গাজীপুর-৫ আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আখতারুজ্জামান জয়ী হয়েছেন। সাবেক এমপি ও ডাকসুর ভিপি নৌকার মেহের আফরোজ চুমকিকে প্রায় ১১ হাজার ভোটে হারিয়েছেন।

ভোটের ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, জাহাঙ্গীর নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে টিকিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। ভোটের মাঠে জাহাঙ্গীর ম্যাজিক এবার খুব একটা কাজে লাগেনি। গত সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর তার মাকে মেয়র পদে দাঁড় করিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে জিতিয়েছিলেন। এবারও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল ও আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ভেবেছিলেন জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তায় ভর করে তারা নৌকাকে হারাতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়ে উঠেনি। দুজনেই প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন নৌকার কাছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান জিতলেও সেখানে জাহাঙ্গীর আলমের প্রভাব কতটা কাজে লেগেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সিটির মাত্র তিনটি ওয়ার্ড ওই আসনের অন্তর্ভূক্ত। ওই আসনের সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান নিজের জনপ্রিয়তায় ভর করেই পাশ করেছেন বলে মত তার সমর্থকদের।

এসব বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান যুগান্তরকে বলেন, জনগণ এবার প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে সমর্থন ও জাহাঙ্গীর আলমের চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, গত সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কান্নাকাটি করে জনতার আবেগকে কাজে লাগিয়ে তার মা জায়েদা খাতুনকে ভোটে জিতিয়ে ছিলেন। এবার তাকে চিনতে ভুল করেনি ভোটারেরা।

নৌকার সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনি প্রচারে বিভিন্ন পথসভায় লাগামহীন মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর, যেটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সমর্থিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। জাহাঙ্গীরের বক্তৃতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে তাদের প্রতি তার পুঞ্জিভুত আক্রোশের বহি:প্রকাশ পেয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই তিনি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক ও টানা চারবারের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এগুলো ভালোভাবে নেয়নি। ৭ জানুয়ারি ভোটের মাধ্যমে সাধারণ ভোটাররা তার জবাব দিয়েছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ জাহাঙ্গীর সমর্থকরা। অন্যদিকে নৌকার সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত।

প্রসঙ্গত, গাজীপুরে ৫টি আসনে মোট ভোটার ছিল ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ লাখ ৯ হাজার ৯১৯ জন এবং নারী ভোটার ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭১০ জন। ৯৩৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৫ হাজার ৫৬৮টি বুথ (ভোট কক্ষ) নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।