গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবের নিবন্ধন চায় এনবিআর

ডিজিটাল মাধ্যমগুলোকে করের আওতায় আনতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলোর নিবন্ধন নিয়ে কার্যালয় স্থাপন ও লেনদেনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায় রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি।

পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করতে গত পাঁচ বছরে কী পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে গেছে, তাও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এনবিআরের মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের উদ্যোগে বিদেশী অনলাইন মাধ্যমের বিজ্ঞাপনের বিপরীতে রাজস্ব আহরণের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীনের নেতৃত্বে কমিটিতে এনবিআরের কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ইমোসহ ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে প্রতিবছর কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন এবং তা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব জানতে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে তথ্য সংগ্রহে কমিটি গঠন করে এনবিআর। কমিটির সদস্যরা গত পাঁচ বছরে এসব বিদেশী প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহে সবগুলো ব্যাংককে চিঠি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ বিজ্ঞাপন পেয়েছে তার তালিকা ও লেনদেনের তথ্য চেয়েও গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ইমোসহ ডিজিটাল মাধ্যমগুলোকেও চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেবে এনবিআর।

এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীন বলেন, বিদেশী এসব প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিরাট অংকের টাকা চলে যাওয়ায় তা নিয়ে চিন্তিত সরকার। দেশের টাকায় বিজ্ঞাপন হওয়ায় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে মূল্য সংযোজন কর আইনে এ সংক্রান্ত যে বিধান রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখছে এনবিআর।

এ খাত থেকে বিগত সময়ে কী পরিমাণ রাজস্ব এসেছে ও ভবিষ্যতে কেমন আসতে পারে তার একটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কাছে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বছরভিত্তিক তালিকা চাওয়া হবে। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে এনবিআর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগিতা দরকার হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ফেসবুক, ইউটিউবসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনকে করের আওতায় আনার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ লক্ষ্যে অর্থ বিলে বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ করতে আয়কর অধ্যাদেশের একটি ধারাও সংশোধন করে এনবিআর। তবে ১৯৯১ সালের মূল্য সংযোজন কর আইন অনুযায়ী ভার্চুয়াল বিজ্ঞাপনকে সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত দাবি করে বাজেটের আগেই ভ্যাট চেয়ে নির্দেশনা জারি করে সংস্থাটি।

তখনই ভার্চুয়াল লেনদেনের তথ্য ও পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কর্তন করে তা পরিশোধ করতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে পত্র দেয় এনবিআর। তবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রেরণ করায় তা সঠিকভাবে আদায় করতে পারছে না সরকার। এ অবস্থায় নতুন করে পদক্ষেপ নিচ্ছে এনবিআর।