গোপালগঞ্জে মধুমতি নদী-কংশুর খালের সংযোগে ধান উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার টন

জেলার মধুমতি নদীর সঙ্গে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর কংশুরে খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) নদী ও খালের সংযোগ স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। এই সংযোগের ফলে চাষাবাদের আওতায় আসবে জেলার ৩৫ টি গ্রামের ১ হাজার ৫০০ একর জমি। এতে ধানের উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার টন।

কংশুরে খালের মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ ছিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ সালে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের (কাটা মধুমতি নদী) ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় এই খালের মুখটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া, দূর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩৫টি গ্রামের কৃষক চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব গ্রামের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন খালটি নদীর সাথে সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০০ মিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুন্নাহার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসিন উদ্দীন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন খান, উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের কংশুর গ্রামের কৃষক মো. হাফিজুর মোল্লা (৫৫) বলেন, জমির পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা না থাকায় এসব এলাকার কৃষি জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কংশুর খালের সাথে আরো ১২টি খালের সংযোগ আছে। খালের সাথে নদীর নদীর সংযোগ স্থাপন হওয়ায় করপাড়া, দুর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের চাষাবাদ সহজ হবে। এতে ফসল উৎপাদন বাড়বে। এখন আর ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করতে হবে না। ফসল উৎপাদনে সেচ খরচ কমবে।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৫ বছর পরে খালটি নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেয়া হলো। এতে খালটিতে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে এই খালের পানি ব্যবহৃত হবে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে এবং অনাবাদী ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে অন্তত ১০ হাজার টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে।’

গোপালগঞ্জ পৌরসভার পৌরপিতা মেয়র জনাব মো: শেখ রকিব হোসেন জানান, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, বঙ্গবন্ধু কণ্যার এ শ্লোগানে ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের খাদ্য চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশ যেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে তার জন্য আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে।’

জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘নদীর সাথে খালটির পুন:সংযোগ স্থাপন হওয়ায় এলাকায় চাষাবাদের উন্নয়ন ঘটবে। অনাবাদি জমিতে আবাদ হবে। এতে বাড়তি ফসল উৎপাদন বাড়বে এবং দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।’