ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত!: হতে পারে জলোচ্ছ্বাস

দিঘা-বালেশ্বর হয়ে যেতে পারে ঝাড়খন্ডের দিকে
২৬ মে বিকাল বা সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেসময় পূর্ণিমা থাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিমুখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার দিকে। তবে কোনো কারণে এর গতিপথ পাল্টে গেলে এটি উপকূলে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করছে। বাতাসের গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঝড়টি আইলা বা আম্পানের মতো সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস থেকে বাংলাদেশ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিবিষয়ক জরুরি সভায় তিনি এ কথা জানান।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াস থেকে বাংলাদেশ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। আম্পানের মতো ইয়াস যে শক্তিশালী হচ্ছে না, তা প্রায় ৯০ শতাংশ নিশ্চিত।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, বর্তমান অবস্থায় ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। এখন আর সতর্কসংকেত বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে বিপৎসংকেত পাওয়ামাত্র আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাওয়া যায়।

সোমবার বিকেলে আবহাওয়া অফিস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইয়াস বর্তমানে ৪ কিমি বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। বিকেল ৩টায় এটি উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে, বালাসোর থেকে ৬২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬১০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

বর্তমানে এটার যে গতিমুখ তা বিশ্লেষণ করে আইএমডি বলছে, ২৬ মে সকালের দিকে এটি উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে চলে আসবে। আর দুপুরের দিকে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যভাগ দিয়ে বালাসোরের কাছে কোনো এলাকা দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসবে। সে সময়ও এটি অতিপ্রবল ঝড় হিসেবে তান্ডব চালাবে। ইয়াস কেন্দ্রে তখন ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ কিমি।

আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছে, যত স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে তত গতিবেগ বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সোমবার ভারতের মৌসম ভবনের রাত সাড়ে ৮টার বুলেটিন অনুযায়ী, গত ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ইয়াস। ঐ মুহূর্তে দিঘা থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। গতিবেগ বাড়লেও গতিপথ একই রয়েছে ইয়াস-এর। অর্থাৎ বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যবর্তী জায়গা ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ইয়াস অতিক্রম করবে বলে পূর্বাভাস। তার পরে ঝাড়খন্ডের দিকে এগিয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়।

মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলেই জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মৌসম ভবন। আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছনোর কথা ইয়াস-এর। তার পর বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস।

ভারতের মৌসম ভবন আরো জানিয়েছে, স্থলভাগে ইয়াস আছড়ে পড়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের নিচু এলাকা অর্থাৎ দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং ওড়িশার বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রপারা ও জগৎসিংহপুরে ২ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ দেখা যাবে।