চুয়াডাঙ্গায় সুন্দর হা‌তের লেখা প্রতি‌যো‌গিতায় বেঞ্চ না পাওয়ার অ‌ভি‌যোগ

ভাষা আন্দোল‌নের মাস ফেব্রুয়ারী। অ‌নেক গুরুত্বপূর্ণ মাস এটি। মা‌য়ের ভাষা রাষ্ট্রীয়ভা‌বে প্রতি‌ষ্ঠিত কর‌তে ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অন্যতম মু‌ক্তি সেনা রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকতসহ শহীদ হন অ‌নেক তরুণ। অার এ শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনা‌রে ফু‌লেল শুভেচ্ছা সিক্ত ক‌রে যথাযথ মর্যাদার সা‌থে পালন ক‌রে বাংলা‌দেশসহ বি‌শ্বের মানুষ। এ দিবসটি‌কে স্মরণ ক‌রে বি‌ভিন্ন অনুষ্ঠা‌নের মধ‌্যদি‌য়ে খেলাধুলা চিত্রাংকন সুন্দর হা‌তের লেখাসহ প্রতি‌যো‌গিতা অনু‌ষ্ঠিত হয় সারা‌ দে‌শের ন‌্যায় চুয়াড‌াঙ্গা‌তেও। এবারও তার ব‌্যত‌্যয় ঘ‌টে‌নি। সেল‌ক্ষ্যে (২১ ফেব্রুয়ারী) মঙ্গলব‌ার চুয়াডাঙ্গার জীবননগ‌রে আয়ো‌জিত হয় সুন্দর হা‌তের লেখা প্রতি‌যো‌গিতা।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারী) জীবননগর উপজেলা প্রশাসন শিশু‌দের হা‌তের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অংশ নেয় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী। হা‌তের লেখা সুন্দর কর‌ার বি‌শেষ মাধ‌্যম চেয়া‌রে ব‌সে বে‌ঞ্চি‌তে কিংবা নি‌চে প্রয়োজনীয় জায়গায় সুষ্ঠুভা‌বে কার্যক্রম চা‌লি‌য়ে যাওয়া।

ত‌বে প্রতি‌যো‌গিতায় চেয়ার বে‌ঞ্চের ব‌্যবস্থা ছিল ঠিকই। কিন্তু অংশগ্রহণকারী প্রতি‌যোগী‌দের অ‌র্ধেকই চেয়ার ও বেঞ্চ পায়‌নি। চেয়ার পে‌লেও পায়‌নি বেঞ্চ। এতে ক‌রে সুষ্ঠু ও সুন্দরভা‌বে যারা‌ লেখায় আত্ম‌বিশ্বাসী ত‌া‌দের অ‌নেক‌কেই শুধু চেয়ার দেয়া হয়। এমন অব‌হেলায় চেয়া‌রে ব‌সে পা‌য়ের ওপর খাতা রে‌খে সুন্দর হা‌তের লেখা প্রতি‌যো‌গিতায় সা‌মিল হ‌তে হ‌য়ে‌ছে। ফ‌লে আত্ম‌বিশ্বাসী শিক্ষ‌ার্থীরা প্রয়োজনীয় ফলাফ‌লে এগো‌তে পারে‌নি।

জীবননগর উপ‌জেলা প্রশাস‌নের এমন অব‌্যবস্থাপনায় যেমন ক্ষোভ প্রকাশ ক‌রে‌ছে শিক্ষার্থীর অ‌ভিভাবকরা তেমনী কোমলম‌তি শিশু‌দের মান‌সিকভা‌বেও দুর্বল হ‌য়ে‌ছে।

এ বিষ‌য়ে অ‌ভি‌যোগ তু‌লে রাখি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিসা জানায়, চেয়ারে বসে কি সুন্দর লেখা যায়? স্কুলে বসার জন্য চেয়ার আর লেখার জন্য টেবিল থাকে। এখানে শুধু একটা চেয়ার দিয়েছে। লিখব কিসের ওপর? প্রাইড স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, প্রথম থেকেই আয়োজনে নানা অব্যবস্থপনা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, তবে লেখার জন্য কোন বেঞ্চ বা টেবিল রাখা হয়‌নি। পায়ের ওপর খাতা রেখে ভালো হাতের লেখা তো সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় আমরা আয়োজন কমিটিকে দুই ধাপে শিক্ষার্থী‌দের অংশগ্রহণ করার কথা বলা হ‌লেও তা‌তে কো‌নো গুরুত্ব দেয়‌নি উপ‌জেলা প্রশাসন আয়োজক ক‌মি‌টি। এজন্য অনেকেই চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রাখি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক উজ্জ্বল হোসেন খোকন বলেন, হাতে লেখা ভা‌লো করার জন্য অবশ্যই বেঞ্চ দরকার। না হলে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা করার দরকার ছিল। এখানে চেয়ারের ওপর হাতের লেখা নেয়া হচ্ছে। এভা‌বে কোন শিক্ষার্থী সুন্দর হা‌তের লেখা কর‌তে পারে না। উপ‌জেলা প্রশস‌নের এমন অব‌হেলা আয়োজ‌নে অবাক ক‌রে‌ছে অ‌ভিভাবগণ‌কে। এ বিষ‌য়ে ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষকে ভালোভা‌বে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জা‌নি‌য়ে‌ছে অংশগ্রহণকারী অ‌ভিভাবকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিযোগিতা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন অব্যস্থপনার দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রভাত ফেরি শেষে এখানে আলোচনা সভা হয়েছে। এ কারণে চেয়ারে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়। অন্য উপজেলায় চেয়ারের সঙ্গে লেখার জন্য টেবিলের মতো হাতলের ব্যবস্থা থাকে। তবে এখানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাই শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়ে‌ছে।

এবিষয়ে জীবননগর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী সামসুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকুনুজ্জামানকে ফোন করেন। এর পরপরই ইউএনও প্রতিযোগিতার স্থানে আসেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের জন্য একটি উপকমিটি করা হয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনা খুবই দুঃখজনক।