ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নেতার অন্যরকম বন্ধুত্ব

রাজনীতির মাঠে তারা একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মাদক তাদের এক করে দিয়েছে। মাদক ব্যবসার কারণে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের চার নেতার মধ্যে গড়ে উঠেছে গভীর সম্পর্ক। তারা একে-অপরের বন্ধু।

বাইরের লোক তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি জানলেও ভেতরে তাদের চমতকার বোঝাপড়া। মাদক ব্যবসার অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে কখনো তাদের দ্বন্দ্ব হয়নি।

বরিশাল নগরীতে পুলিশের চোখ এড়িয়ে কয়েক বছর ধরে এভাবেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

বুধবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান তাদের একজন। এ সময় উদ্ধার করা হয় ২২২ বোতল ফেনসিডিল। ফাঁস হয়ে যায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের চার নেতার বন্ধুত্বের আসল রহস্য।

মহানগর ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার নগরীর নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড মুসলিম গোরস্থান রোড এলাকার পণ্ডিত বাড়ি থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মুশফিকুল হাসান মাসুম (৩৮) এবং তার সহযোগী সবুজ ইসলাম শাহিনকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় ২১৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডস্থ বৈদ্যপাড়া মোড় এলাকার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আদনান আলম বাবুর চারতলা বাড়ির সিঁড়ির নিচ থেকে আরও সাত বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুশফিকুল হাসান মাসুম মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আরও সাত বন্ধুর নাম জানান। তারা হলেন- বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএম কলেজ অস্থায়ী কর্ম-পরিষদের ভিপি মঈন তুষার, ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার সাচিপ রাজিব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আদনান আলম বাবু, বিএন খান কলেজের শিক্ষক মো. হারুন খান, সবুজ ইসলাম শাহিন (৪০) এবং রাজশাহীর আছমত খান।

গ্রেফতার মাসুম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, রাজনীতির মাঠে তারা একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মাদক ব্যবসার কারণে তাদের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। ব্যবসায় বেশিরভাগ পুঁজি ছিল বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ভিপি মঈন তুষার, ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার সাচিপ রাজিব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আদনান আলম বাবু ও বিএন খান কলেজের শিক্ষক মো. হারুন খানের।

মাঝেমধ্যে মাসুমও টাকা খাটাতেন মাদক ব্যবসায়। সীমান্ত অঞ্চল থেকে রাজশাহীর আছমত খান ও সবুজ ইসলাম শাহিন মাদক নিয়ে আসতেন। খুচরা বিক্রির জন্য আরও কয়েকজন নিয়োজিত ছিলেন।

মাসুম আরও জানান, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল চমতকার। ব্যবসা নিয়ে একটু ঝামেলা হলে সব অংশীদার এক হয়ে তা সমাধান করতেন। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি।

ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশিষ পাল বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে মাসুম এবং সবুজ নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে ২২২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। মাসুম এবং সবুজ ইসলাম শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদে মঈন তুষারসহ আরও পাঁজনের নাম জানায়। যে কারণে তাদেরসহ মোট সাতজনকে আসামি করে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার মাসুম নিজেকে ছাত্রদল নেতা ও মামলার দুই নম্বর আসামিকে ছাত্রলীগ নেতা বলে পরিচয় দিয়েছে।

এসআই আশিষ পাল আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার গ্রেফতার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে।