জয় আমাদের হবেই : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা অন্য কেউ যাই করুক না কেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই জয় হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের আসল উদ্দেশ্য দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি। তবে জনগণের শক্তিতে সেটা ব্যর্থ করে দেবে আওয়ামী লীগ।

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন দলের সভাপতি। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সংসদীয় দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জয় আমাদের হবেই। জনগণ আমাদের সাথে আছে। জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। জনগণের ভোটেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আমার জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস আছে। যে উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে সকলের জীবনে লেগেছে, নিশ্চয় তারা সেটা ধরে রাখবে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেবে। আওয়ামী লীগের জয় হবে।’

‘ইনশাল্লাহ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও আমরা উদযাপন করতে পারব। আমরা না থাকলে আর কেউ ভালোভাবে করতে পারবে না। কারণ তাদের মনে পাকিস্তান।’

ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে কটাক্ষ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো অনেকে বলে পাকিস্তান নাকি আমাদের চেয়ে বেশি উন্নত। যারা এটা বলে তাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। বলা উচিত, পাকিস্তানে যেয়ে দেখে আসেন। পাকিস্তানের ঋণ শোধের জন্য সৌদি আরব তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। আমাদের কারো কাছে কোনো ঋণ নেই।’

‘নির্দলীয় সরকার কীভাবে করব?’
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু একটা রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে যে, কোনো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেই রায় থাকা সত্ত্বেও আমাদের আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী থেকে শুরু করে যারা বড় বড় আইনজীবী তারা কীভাবে দাবি করে যে, এখানে আরেকটা সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিটা কেন? কীভাবে হবে?’

টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে উচ্চ আদালতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা হয়। এরপর সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে সরকার। তা মেনে নেয়নি আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ¦ী বিএনপি এবং তার শরিকরা। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা বর্জন করে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন।

আওয়ামী লীগ এবারও বলছে, ভোট হবে সংবিধানের আলোকে। বিএনপি মাঝে তত্ত্বাবধায়কের দাবি ভুলে সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছিল, যদিও সে সরকারের রূপরেখা দিতে না পেরে আবার নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে আসে তারা।

এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেন, বিএনপি, নাগরিক ঐক্য এবং জেএসডি নিয়ে গঠন হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর প্রথম দিনেই এই জোটের পক্ষ থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রায়ের পর আমাদের সংবিধান সংশোধন করেছি। ১৯৭২ এর সংবিধানে ঠিক যেরকম ছিল, যেভাবে নির্বাচনের জন্য যা যা লেখা ছিল আমরা সেইভাবেই নিয়ে এসেছি।’

ড. কামালের নাম উল্লেখ না করে তার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে একদিকে দাবি করবে সংবিধান রচয়িতা; অপরদিকে আবার সেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করার জন্য নির্বাচনের অন্য ফর্মুলা দিবে। অনির্বাচিত একটা সরকার গঠন করতে বলবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে বলবে। এই আবদারটা কেন? কার স্বার্থে? কিসের স্বার্থে? সেটাই আমরা বুঝতে চাই। কী কারণে তারা এটা চাচ্ছে। তাদের যদি এতো শক্তি থাকে জনগণের সাথে আসবে, ভোট হবে।’

‘তারা কি আসলে নির্বাচন চায়?’
ভোট গ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম নিয়ে আপত্তিরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ইভিএম দিতে চাই, দ্রুত মানুষ ভোট দিতে পারে। তাতেও আবার আপত্তি কিসের? সেটাও আমরা বুঝতে পারি না। ইভিএম আজকে ইন্টারন্যাশনালি ব্যবহার করে। এতে কেউ কারো ভোট চুরি করতে পারবে না। তাহলে সেখানে কী করে তারা আপত্তি জানায়? তারা নির্বাচন চায় কি চায় না সেটাই বড়ো কথা।’

‘এখন একটা ঐক্যজোট হয়েছে। তারা মুখে বড়ো বড়ো কথা বলে আর দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এবং সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান তাদের সাথে জোট করেছে। সেই দলসহ বিএনপি জামায়াত জোটসহ ঐক্য হয়েছে। …আর্ন্তজাতিকভাবেই প্রমাণিত বিএনপি একটি দুর্নীতিবাজ দল। দেশটাকে তারা লুটে খেয়েছিল।’

ঐক্যফ্রন্টকে সরকার সমাবেশ করতে দিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা বলল, আমরা নাকি তাদের মিটিং করতে দিচ্ছি না। সিলেটে তারা মিটিং করল। আগেই তারা বলে, আমাদের দিচ্ছে না। আমার যেটা মনে হয়, যে তারা চায় আমরা তাদেরকে বাধা দিই।’