ঠাকুরগাঁওয়ে “ভুল্লী থানা” উদ্বোধন হওয়ায় আনন্দিত এলাকাবাসী

উত্তর জনপদের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ‘ভুল্লী থানা’ উদ্বোধন হওয়ায় আনন্দিত এলাকাবাসী।

স্বপ্নের ভূল্লী থানা উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এলাকার মানুষজন আইনী সেবা পেতে শুরু করেছেন। আইন-শৃংখলা রক্ষায় থানাটি সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন ৫ ইউনিয়নের জনসাধারণ। ইতিমধ্যে থানা এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সব কিছু মিলিয়ে আনন্দে ভাসছেন থানা এলাকার মানুষজন।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া, আউলিয়াপুর, দেবীপুর, বড়গাঁও ও শুখানপুকুরী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নতুন এ থানা। স্থানীয় ভুল্লী নদীর নামানুসারে থানাটির নামকরণ করা হয়েছে। নবগঠিত এ থানার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাময়িকভাবে ঠাকুরগাঁও পওর বিভাগ বাপাউবো এর আওতাধীন ভূল্লী কলোনীর কোয়ার্টার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। থানাটির উত্তরে ও পূর্বে পঞ্চগড় জেলার বোদা থানা, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও সদর থানা এবং পশ্চিমে রুহিয়া থানা অবস্থিত। নতুন এ থানার আয়তন ১৩৯ দশমিক ৭৬ বর্গ কি: মি:। জনসংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন, এর মধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ৫৯৫ জন, মহিলা ৬২ হাজার ৮৯ জন। এদের মধ্যে মুসলিম ৮৭ হাজার ৩৫৪ জন, হিন্দু ৩৬ হাজার ২৯ জন, খ্রিস্টান ৭৬১ জন, বৌদ্ধ ২৫ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫১৫ জন। এছাড়াও মহাসড়ক ১৫ কি: মি:, মসজিদ ২৬৪টি, ব্যাংক ৯টি, হাট-বাজার ১৪টি, কলেজ ১টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৩৯টি, মাদ্রাসা ১০টি, মহিলা মাদ্রাসা ১টি, কিন্ডার গার্টেন ২১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫টি, কমিউনিটি কিনিক ১৫টি, চক্ষু হাসপাতাল ১টি, সরকারি শিশু সদন ১টি, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ১টি, ভূমি অফিস ৪টি, পেট্রোল পাম্প ৪টি, ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্র ১টি, নদী ৪টি, সরকারি খাদ্য গুদাম ১টি, ইউনিয়ন প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ১টি, হিমাগার ৪টি এবং এনজিও রয়েছে ৯টি। থানার আওতাধীন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জাঠিভাঙ্গা বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ, ছোট বালিয়া শতবর্ষী জামে মসজিদ, সাপটি বুরুজ, ভূল্লী বাঁধ, রাজা ভিরাট পুকুর, সাসলা পিয়ালা দিষি ও খুররম খাঁ দিঘী।
দেবীপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম বলেন, ভূল্লী থানার জন্য আমরা সকলে মিলে অনেক পরিশ্রম করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কষ্টের মূল্যায়ন করেছেন। সত্যিই আমরা আনন্দিত।

ভূল্লী থানা বাস্তবায়ন কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব, অধ্যক্ষ মো: জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, গেল বছরের ২৯ ডিসেম্বর স্বপ্নের ভুল্লী থানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি। নবগঠিত ভূল্লী থানার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ইতিপূর্বে ৪টি ইউনিয়ন রুহিয়া থানায় গ্যাজেটভুক্ত হয় ২০০১ সালে। তখন থেকে এ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ রুহিয়া দূর হওয়ায় সেখানে যাবে না বিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো: নাসিম এটাকে স্থগিত করেন।

তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে পুনরায় আবার এ ইউনিয়নগুলোকে নিয়ে রুহিয়া থানায় অন্তভূক্তির পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। ওই সময় এ চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণের পক্ষে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যন আব্দুল জলিল বাদী হয়ে হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট করেন। এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন (বর্তমান রেলমন্ত্রী) সেই সময় আমাদের অনেক সহায়তা করেন। তখন একজন ব্যারিস্টার নিয়ে রুহিয়া থানা থেকে আমাদের এ কয়েকটি ইউনিয়নকে কেটে দেন। পরে প্রথমে ৩ মাস, পরে ৬মাস স্টে অর্ডার হয়ে পরে আমরা রুহিয়া থানা থেকে অব্যাহতি পাই। পরবর্তিতে আমাদের নেতা রমেশ চন্দ্র সেন এমপি আমাদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেন এবং সহায়তা করেন।

অবশেষে আমাদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় ঘোষনার পর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) সভায় ঠাকুরগাঁও সদর থানাকে বিভক্ত করে ভূল্লী নামে নতুন থানা গঠন করার প্রস্তাবনা অনুমোদন পায়। অবশেষে থানা হওয়ায় ভুল্লীবাসীর এত আনন্দ, এত খুশি যে, তা বলে বোঝানো যাবে না। ভুল্লীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেতা রমেশ চন্দ্র সেন এমপিকে ধন্যবাদ জানাই। এখন আমরা অপেক্ষায় থাকবো কোনদিন ভূল্লী উপজেলা হবে। থানা হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এলাকার মানুষের মনে ভালো, পজিটিভ একটা প্রভাব পরেছে। মাদকের প্রভাব কমে গেছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। থানাটি এখানে হওয়ার কারনে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেক ভাল হয়েছে বলে মনে করি।

নবগঠিত ভুল্লী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান বলেন, নতুন থানার প্রথম অফিসার ইনচার্জ হওয়াতে আমার নিজেরেই অনেক ভাল লাগছে। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এলাকার মানুষের মনে উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক ভাল লেগেছে। যে কোন মানুষ রাত-দিন যে কোন সময় থানায় আসছেন, যার যে টুকু আইনী সেবা প্রয়োজন তা গ্রহন করছেন। ভুল্লী থানাবাসীর জন্য আইনী সেবা প্রদানে আমরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। উদ্বোধনের পর থেকে রেগুলার মামলা হয়েছে ৪টি, অপমৃত্যু মামলা হয়েছে ২টি। সব মিলিয়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অনেক ভাল।