ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাতক্ষীরা বারের সাবেক সভাপতি এম শাহ আলম গ্রেপ্তার

এক শিক্ষানবীশ আইনজীবীর গলায় ‘আমি আইনজীবী নই, আমি টাউট’ এমন লেখা ঝুলিয়ে ছবি তুলে ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ও সম্মানহানি করার অভিযোগে দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. এম শাহ আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল সবুজবাগের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার বাবার নাম জহুরুল ইসলাম। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির ৭ বার সভাপতি এবং ৭ বার সম্পাদক ছিলেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানিকপুর গ্রামের ফজলুল হক গাজীর ছেলে মোঃ লিয়াকত আলী ২০১২ সালে সাতক্ষীরা ল’ কলেজ থেকে পাস করেন। ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আব্দুল মজিদ (২) এর কাছ থেকে শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।

২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে শ্যামনগর সহকারি জজ আদালতে তার নিজেরই দেঃ ২৯/১৯ মামলার সাক্ষী দেওয়ার জন্য তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় এড. সিরাজুল ইসলাম (৫), এড. তারিক ইকবাল তপু, এড. শাহেদুজ্জামান শাহেদ, এড. ফুয়াদ হাবিব টিটো পূর্বপরিকল্পিকভাবে তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে জাপটে ধরে তৎকালিন সভাপতি এড. এ শাহ আলমের তিন তলার ল’ চেম্বারে নিয়ে যায়।

এ সময় এড. এম শাহ আলম শিক্ষানবীশ আইনজীবী এড. লিয়াকত আলীর গলায় ‘আমি আইনজীবী নই, আমি টাউট’ এমন একটি লেখা ঝুলিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে তা নিজ ফেইসবুক আইডিতে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে চারজন আইনজীবী ওই লেখা শেয়ার করেন। কিল, চড় ও ঘুষি মেরে তাকে জখম করেন ওই আইনজীবীরা। পরবর্তীতে তাকে কোর্টে না আসার কথা বলে ও দেওয়ানী ২৯/১৯ মামলায় সাক্ষী দিতে পারবি না, এক কথা না মানলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে, খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত করা হয়।

দেশ বিদেশের বন্ধু ও স্বজনরা ফেইসবুকে দেখে তাকে জানানোয় তার চরম সম্মানহানি হয়। এ ঘটনায় গত ১২ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এড. শাহ আলম, এড. সিরাজুল ইসলাম (৫), এড. তারিক ইকবাল তপু, এড. শাহেদুজ্জামান শাহেদ, এড. ফুয়াদ হাবিব টিটোর নামে মামলা করেন শিক্ষানবীশ আইনজীবী লিয়াকত হোসেন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ কুমার জানান, ‘শিক্ষানবীশ লিয়াকত আলীর মামলায় রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে এড. এম শাহ আলমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ধর্ষণ মামলার এক আসামীর জামিন শুনানীকালে জামিনের বিরোধিতা করায় পিপি সম্পর্কে কটূক্তি করায় ২৮ এপ্রিল এড. এম শাহ আরমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো একটি মামলা হয়।

এড. শাহ আলমকে আটকের ঘটনায় জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নিন্দা ও মুক্তির দাবি

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির বার বার নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এড. শাহ আলমকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ।
অবিলম্বে এড. শাহ আলমকে নি:শর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলার দায় হতে অব্যাহতি দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, যেখানে এড. শাহ আলম কে মারপিট করা হলো, অফিস ভাংচুর করা হলো। সেই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার না করে উল্টো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে আটক করে শান্ত সাতক্ষীরাকে অশান্ত করার পায়তারা করা হচ্ছে।

বিবৃতিদাতারা হলেন, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মহিবুল্লাহ মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, কেন্দ্রীয় পার্টির সদস্য সাবীর হোসেন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য উপাধ্যক্ষ ময়নুল হাসান, স্বপন কুমার শীল, অজিত কুমার রাজবংশী, প্রকৌশলী আবেদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ মাস্টার, নারী নেত্রী নাসরীন খান লিপি, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আব্দুল জলিল মোড়ল, অধ্যক্ষ শীবপদ গাইন, প্রভাষক হিরন্ময় মন্ডল প্রমুখ।