ড. কামাল – মন্টু ‘দ্বন্দ্বে’ ভাঙনের মুখে গণফোরাম

দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু অভ্যন্তরীণ ‘দ্বন্দ্বে’ ভাঙনের মুখে গণফোরাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির নির্বাচিতদের প্রার্থীর শপথ নেয়া নিয়ে দুই নেতা ‘দ্বিমুখী’ অবস্থান নিয়েছেন।

মুলত: সংসদে যাওয়ার বিষয়ে কামাল হোসেন ‘ইতিবাচক’ থাকলেও শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন মন্টু। এই নিয়ে প্রকাশ্য কোনো দ্বন্দ্ব না জড়ালেও ভেতরে ভেতরে চাপ ক্ষোভ ছিল। দলের বিশেষ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এর বর্হিপ্রকাশ ঘটল।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে দলের নিদের্শ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির আহমেদ খান যোগ দেয়ায় গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক ড. কামাল হোসেন সঙ্গে না থাকার ঘোষণা দিয়ে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন।

এদিকে মন্টু বিশেষ কাউন্সিল যোগ না দেয়ার শীর্ষ নেতাদরে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে মন্টুর যোগ না দেয়ার প্রসঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘মোস্তফা মহসীন মন্টু অসুস্থ। তিনি ভারতে চিকিৎসা নিতে গেছেন।’

কিন্তু মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে, তিনি বাসায় আছেন বলে জানান। তবে কেন কাউন্সিলে যোগ দেননি এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি মন্টু।

দীর্ঘ ৮ বছর পর গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে কাউন্সিল শুরু হয়ে জুম্মার নামাজের জন্য বিরতি দেয়া হয়। এরপর বিকেলে ক্লোজ ডোরে বিশেষ বৈঠক শুরু হয়।

আর এই কাউন্সিলে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানও যোগ দেন। মূল মঞ্চের ড. কামালের চেয়ারের কয়েক আসন পরেই তিনি বসেন।

এই ক্ষোপে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন রফিকুল ইসলাম পথিক। চলে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কার না করা হলেও কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মোকাব্বির খানকে। মোকাব্বির খান ছাড়াও আমন্ত্রণ পাননি ধানের শীষ প্রতীকে গণফোরামের বিজয়ী প্রার্থী সুলতান মনসুরও। শপথ গ্রহণের পরই তাকে অবশ্য বহিষ্কার করেছিল গণফোরাম। তাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গেলে এক কথা বলেন, বাসায় গেলে আরেক কথা বলেন। মোকাব্বির খান চেম্বারে গেলে তাকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি যখন বাসায় যান তখন তাকে বলেন সংসদে যাও। উনার দ্বৈতনীতির কারণে আসলে দল করা যায় না।’

এদিকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ বলেন, ‘কমিটি গঠনে কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনসহ দলের শীর্ষনেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিবেন। এখনও কাউকে কোনো পদে বসানো হয়নি।’

তবে মন্টুর অনুসারীদের সূত্রে জানা গেছে, ‘তারা মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে আলাদা দলগঠনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। ‍খুব শিগগিরই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।’

এর আগে ২০১১ সাল থেকে মোস্তফা মহসীন মন্টু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছরের শেষ দিকে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় থেকে তিনি সক্রিয় হন। তিনি ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরাজিত হয়। মাত্র ৮ জন সংসদ্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট।