তখন প্রতিটি পোষা প্রাণীই হয়ে উঠে আদরের সন্তান!

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু : যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই, তারা গৃহস্থ এবং অবোধ প্রাণীর এই কান্না, ভালোবাসার গভীরতা অনুমান করতে পারলেও অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবেন না।

আমার প্রত্যক্ষ কিছু অভিজ্ঞতা আছে বলেই বলছি, কুরবানির পশুর হাটে বিক্রির নিয়তেই গরুগুলোকে লালন পালন করা হয়। কেউ এক বছর, কেউবা দেড়-দু বছর পর্যন্ত পালেন। এই লম্বা সময় গরুগুলোকে যে যত্ন, আদরে বড় করা হয়, বলা যায় কৃষক বা গৃহস্থরা নিজ সন্তানের প্রতিও তখন অতটা যত্নবান থাকেন না।

শুধু খাবার দেয়া না, গোছল করানো না, শরীরে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়া, কথা বলার মধ্যদিয়ে এক ধরণের আত্মিক সম্পর্ক পশু আর মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়ে যায়। উভয়ে উভয়কে বুঝতে পারে।

একটা ঘটনা বলি। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্ত যতটুকু আমি দেখেছি তাই বলছি।

আমাদের প্রতিবেশীর এমন একটি গরুকে হাটের দিন সকালে যখন গোসল করানো হল, গোছল শেষে শিংয়ে, কপালে সরষের তেল মাখিয়ে, নতুন পাটের রশি আর কাগজের ফুলের মালায় সাজানো হল তখন থেকেই গরুটার আচরণ বদলে গেল। তার দুচোখ বেয়ে অবিরাম জলধারা বইতে দেখলাম। শত চেষ্টার পরও কোন কিছুই খাওয়ানো গেল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। বিকেলে তাকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে হাটে নেয়া হল। ভাল দামে বিক্রিও হল।

সেই গরু মধ্যরাতে নতুন মালিকের বাড়ি থেকে গলায় বাঁধা রশি ছিঁড়ে ৭/৮ কিলোমিটার দৌড়ে তার পুরোন ঠিকানায় ফিরে এলো। মধ্যরাতে গরুটির চিৎকারে আমাদের ঘুম ভেঙে ছিল। উঠে গিয়ে দেখেছি তখনও তার দুচোখে অশ্রুধারা বইছিল। সেই রাতে গরুটিকে ফিরিয়ে নেবার জন্য লোক এসেছিল। আদি মালিক গরুটিকে আর ফেরত দেন নি,টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

গৃহস্থ, কৃষকরা যখন আদরে ভালোবাসায় বড় করে তোলা গরুকে বিক্রি করে দেন তখন তাদের মাঝে কেবল ভালবাসা, মায়া আর স্মৃতিই গভীরভাবে কাজ করে না,অপরাধবোধও এই বলে জেগে উঠে যে, ‘কেবল অভাব,কেবল টাকার জন্যই প্রিয় পশুকে বেঁচে দিচ্ছি, দুদিন পরই ওকে কোরবানি দেয়া হবে, মরে যাবে।’

তখন প্রতিটি পোষা প্রাণীই হয়ে উঠে আদরের সন্তান।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া