দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি ১৫ বছরেও বিচার মেলেনি ? আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলেছেন নেতারা

২৬ আগস্ট, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এইদিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি না করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তৎকালীন বিডিআর-পুলিশের গুলিতে আমিন, সালেকিন ও তরিকুল নামের তিন যুবক নিহত হন। আহত হন অন্তত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ।

তৎকালীন সময়ে টানা পাঁচদিন আন্দোলন চলাকালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আন্দলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ছয়-দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।

সেই ছয়-দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে, এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিষ্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলিবর্ষণসহ হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতারসহ শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা।

তবে নিহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের পরিবারগুলো কিছু ক্ষতিপূরণ পাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলেছেন যারা:

আন্দোলনকারী সংগঠনের দুজন নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদুৎবন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহŸায়ক মুরতুজা সরকার মানিক পরপর দুবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে পরস্পর নেতৃত্বে দ্ব›দ্ব শুরু হয়। এতে করে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে যে অনৈক্য দেখা দেয়, তা অনেকটা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ কারণে নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছে।

২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটি ‘‘সম্পদ রক্ষা দিবস’’ এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’’ হিসেবে পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে স্মরণসভা এবং মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় দোয়া এবং বিশেষ প্রার্থনা।