দিনাজপুরের বীরগঞ্জের টিউবওয়েলে উঠছে না পানি; জনজীবন অতিষ্ট

গ্রীষ্ম মৌসুমে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে করে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের কয়েকটি গ্রামের টিউবওয়েল ও সেচযন্ত্রে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। ফলে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রাম ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশে টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। আর কিছু টিউবওয়েলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম পানি উঠছে। মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের পুরো এলাকাজুড়ে টিউবওয়েল থেকে পানি না উঠায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকারিভাবে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ২৬টি সাবমারসিবল পানির পাম্প রয়েছে। এছাড়া পানির সংকট কাটাতে কেউ কেউ বাড়িতে গভীর নলক‚প বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছে।

মোহাম্মদপুর অধীকারি ঠাকুরগাড়া গ্রামের বাসিন্দা মেনোকা অধীকারি বলেন, কয়েক বছর ধরে ৩০-৩৫টি পরিবার পানি সংকটে আছি। এ ভোগান্তির কথা বলে বুঝানোর মতো না। পানি না থাকায় দূরের একটি পুকুরে গিয়ে গোসল করে আসি। আবার যেখানে ডিপ টিউবওয়েল আছে বা মটর দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছে সেখান থেকে খাবার পানি এনে জমা রাখি। এভাবে কষ্ট করে চলছি। আমরা চাই আমাদের এখানে একটি ভালো মটর পাম্পের ব্যবস্থা করা হোক। যেটা দিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাতে পারি।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোপাল দেব শর্ম্মা বলেন, আমি আমার ইউনিয়নে ১৯৯২ সাল থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। মাঝে একবার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ৩২ হাজার মানুষের বসবাস। এ ইউনিয়নে ২০০৫ সাল থেকে পানির সমস্যা দেখা দেয়। নদী-নালা, পুকুরগুলোতেও পানি শুকিয়ে যায়। কোথাও আগুন লাগলে আগুন নেভানোর জন্য ধুলা মাটি ছাড়া পানি থাকে না। তবে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে প্রচুর বৃষ্টি হলে তখন একটু টিউবওয়েল দিয়ে পানি বের হয়। ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস থেকে পাম্প ও সাবমারসিবল পাম্পের ব্যবস্থা করেছি। সেগুলো থেকে পানি নিয়ে কোনোমতে পানির চাহিদা পূরণ করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, পানির জন্য আমাদের ইউনিয়নে আধুনিক প্রকল্প চালু করা হোক।

এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমাযুন কবির বলেন, বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রাম ইউনিয়নের কিছু অংশে পানির সমস্যা হচ্ছে। তবে মোহাম্মদপুর পুরো ইউনিয়নজুড়ে পানির সমস্যা রয়েছে। এর আগেও পানির সমস্যা ছিল তবে ২০১৮ সালের পর থেকে প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেখা গেছে সাধারণ টিউবওয়েলগুলো থেকে পানি বের হচ্ছে না।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে নলক‚প দেওয়া হয়েছে সেগুলো থেকে পানি পাচ্ছে। এর বাইরে কোনো টিউবওয়েল থেকে পানি পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, পানির স্তর ৪৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এ কারণে বাসাবাড়ির সাধারণ টিউবওয়েল থেকে পানি বের হচ্ছে না। এজন্য আমরা ২০১৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কমিউনিটি ভিত্তিক ২০০টি পানির ইউনিটের মধ্যে ১৪টির স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিট থেকে ১০টি পরিবার পানির সুবিধা পাবে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে পাঁচটি পরিবার পানির সুবিধা পাবে।

এছাড়া আরও একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে চার শ পরিবার পানির সুবিধা পাবে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত কাজগুলো শেষ হবে এবং পানির ভোগান্তি অনেকটা কমে আসবে।