দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ২০ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ২০ জোড়া অসহায় তরুণ—তরুণীর যৌতুক বিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে নব দম্পতিদেরকে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। যৌতুকের কু—প্রভাব এবং ধর্মীয়ভাবে যৌতুক দেওয়া—নেওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রতিটি ঘরে ঘরে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সকাল থেকেই আনন্দ ঘন মুহুর্তে মানুষ ওই মাঠে আসে যৌতুকবিহীন বিয়ে দেখার জন্য। পরে কুড়ি জোড়া তরুণ—তরুণীকে বর ও কনে সাজিয়ে আনা হয়। এ সময় তাদের বিয়ে পড়ান মাওলানা আবেদ আলী। আগামীর দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনায় তাদের জন্য দোয়া কামনা করা হয়। পরে নব দম্পতিদের হাতে সেলাই মেশিন, ছাগল, লেপ—তোশক, রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, হাড়ি পাতিলসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তুলে দেয়া হয়।

আয়োজকরা জানান, এসব কনের বাবা—মা অত্যন্ত গরীব। তাদের বিয়ে দেয়ার সামর্থ নেই বললেই চলে। আর তাই বিয়ের এমন আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য কনেকে যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দেয়া একই সাথে যৌতুকের ধর্মীয় বিধি—নিষেধ মেনে যৌতুকবিহীন বিয়েতে সাধারণ মানুষের মাঝে এই বার্তা পৌছে দেয়া।

এদিকে বিয়ের এই সুন্দর আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন দিনাজপুর—১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাকারিয়া জাকা। এসময় তিনি ২০ জন কনেকে উপহারসামগ্রী প্রদান করেন।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ও ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের তত্ত্বাবধানে বিয়েতে হাজার হাজার উৎসুক জনতার ঢল নামে। আর এই কুড়ি জোড়া নারী—পুরুষের বিয়ের সব তদারকি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদ দিনাজপুর প্রতিনিধি মাওলানা আইয়ুব আলী আনসারী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ—সভাপতি মোঃ আবু হুসাইন বিপু, মাওলানা নোমান সিদ্দিক, মাওলানা শাহজালাল নাঈম, মাওলানা সালমান, মোঃ মাসুদ সহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজক মাওলানা আইয়ুব আলী আনসারী জানান, আয়োজক ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় তরুণ—তরুণীদের মধ্যে যারা খরচের ভয়ে বৈবাহিক জীবন গঠন করতে পারেন না তাদের জন্যই যৌতুকবিহীন বিয়ের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই ধরনের বিয়ের মাধ্যমে যৌতুকের যে কু—প্রভাব সেটি তুলে ধরা এবং যৌতুক দেওয়া কিংবা নেওয়া যে ধর্মীয়ভাবে নিষেধ সেটিও জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ায় এই লক্ষ্য।

প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাকারিয়া জাকা বলেন, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। আর এই ব্যাধি দুর করার জন্য সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি সকলে যৌতুকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত হবে সমাজ। যৌতুক দেয়া কিংবা নেয়া ধর্মীয়ভাবেও নিষিদ্ধ। এই ধরনের বিয়ে সেই বার্তায় পৌছে দেবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। তিনি নতুন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ তরুণ—তরুণীদের সামাজিক জীবনে সর্বত্র সাফল্য কামনা করে যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।