দুই দশকের মধ্যে এশিয়ার প্রাণকেন্দ্র হবে বাংলাদেশ

এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উন্নত-অনুন্নত সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, জাপান, চীন, ভিয়েতনাম ও ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ উদ্যোগের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর এবং এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে সরকার। নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সরকার এ ব্যাপারে বিভিন্নমুখী চুক্তিরও উদ্যোগ নিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য গঠিত কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে একটি রিজিওনাল ইকোনমিক করিডর গঠনের বিষয়টি নিয়েও উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার এমন বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং জোরদার করার লক্ষ্যমাত্রাও নিয়েছে সরকার।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সম্প্রসারণের ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি ‘রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’র ওপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী নেপাল, ভুটানের সঙ্গে সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ করা হবে। এ ছাড়া রাশিয়া, চীন, জাপান, মালয়েশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক আরো জোরদার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দেশের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।

সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কারিগরি সক্ষমতাও আগের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সম্প্রসারণে লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, কলম্বিয়া এবং আফ্রিকার উগান্ডা, তানজানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির মূল কেন্দ্র এখন এশিয়ায় শিফট হচ্ছে। চলতি শতককে ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’ অভিহিত করে তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী ‘নিউ এশিয়ান টাইগার্স’ হিসেবে পরিচিত। এই অগ্রগতি অব্যাহত রেখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলনভূমি এবং এশিয়ার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব এশিয়ার শিল্পোন্নত দেশ-জাপান-কোরিয়া-মালয়েশিয়ার পাশাপাশি ভারত-ইরান-তুরস্ক ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব দেশের কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগানো, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী রফতানি সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।

বিশেষ করে রাশিয়া-তুরস্ক-ইরান এবং লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, পেরু, কলম্বিয়ায় নতুন রফতানি বাজার সম্প্রসারণে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বেশকিছু দেশে দূতাবাস খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থল হওয়ায় এশিয়ার পূর্ব ও পঞ্চিম অংশের সংযোগ সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইমেজ আরো বৃদ্ধি এবং সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, মেট্রো রেল প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের মধ্যেই উন্নত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে নিতেই এসব উদ্যোগ বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতেও বাড়তি গুরুত্ব থাকছে এসব উদ্যোগে।

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী মিয়ানমারের বিতাড়িত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়-খাবার ও চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইমেজ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছেন।

সূত্র জানায়, দেশের সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণেও ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, বিশ্বের আরো ১৪টি দেশের সঙ্গে শিগগির বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আগে থেকে কাজ করছি। এ ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশকে এশিয়ার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সার্বিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’ বৃদ্ধিকল্পে সার্কভুক্ত ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করা হচ্ছে। আগামী মাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়টি আরো বেগবান হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে প্রতিবেশী এ দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের কারণে এ অগ্রযাত্রায় কিছু ছেদ পড়ে। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলি দাস দায়িত্বভার গ্রহণের পর এ বিষয়ে কার্যক্রম আগের চেয়ে গতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। আরো জানা গেছে, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি এসব দেশের পারস্পরিক বন্দর ব্যবহার, রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ মধ্যে সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি ও সহজিকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে নৌপরিবহন, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে। যদিও ইতোমধ্যে সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ-খুলনা হয়ে ভারতের পঞ্চিমবঙ্গের কলকাতার মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে স্টিমার সার্ভিস (জাহাজ) চালু হয়েছে। ভুটানের সঙ্গেও নৌপথে চলাচলের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে সড়ক ও নৌপথে পণ্য আমদানি-রফতানি করতে ভুটান অনেক আগে থেকেই আগ্রহী। বাংলাদেশেরও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ আছে। আগামী এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিঙের বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।

এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদবলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দিতে আগ্রহী। আগামী মাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বিষয়টি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের আশা প্রকাশ করেন তিনি। সচিব বলেন, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক, নৌ ও আকাশপথে কানেক্টিভিটি আগের চেয়ে জোরদার করা হচ্ছে। আর পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ট্যারিফ আদায়ের বিষয়টিও প্রস্তাবিত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভুটানের জন্য সম্ভাব্য নৌ-রুট হবে— মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে সিরাজগঞ্জ-চিলমারী-দইখামা-ধুপদিয়া হয়ে ভুটান। তিনি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করাই সম্ভাব্য এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তির আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষের মধ্যে আন্তঃচলাচল ও পণ্য পরিবহন সুবিধা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দিতে অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৯ হাজার ৯২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে সড়কপথ উন্নয়নে ১১ হাজার ৯৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা, রেলপথ উন্নয়নে ৩২ হাজার ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নৌপথের উন্নয়নে ১ হাজার ১৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১ হাজার ৮৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, মোংলা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তখন।

আর পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মাশুল আদায়ের বিষয়ে সুপারিশমালায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের জন্য মালামাল বহনকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবহনের অবস্থানের সময়, যাতায়াতের দূরত্ব, লোডিংয়ের পরিমাণ, রাস্তাঘাটের ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ, দুর্ঘটনা, পরিবেশের ক্ষতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মাশুল আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রচলিত নৌ প্রটোকল ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড ও ট্রানজিটের’ আওতায় ভারতকে আশুগঞ্জ বন্দর ও আখাউড়া হয়ে নৌ-ট্রানজিট সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সড়কপথে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে সরাসরি বাস-ট্রাক চলাচলের জন্য ২০১৫ সালের জুনে ভুটানের রাজধানী থিম্ফুতে এ চার দেশের মধ্যে একটি মোটর ভেহিকলস চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নিয়মিত বাস-ট্রাক চলাচল করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সম্প্রসারণে সরকারের এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাশাপাশি বাংলাদেশ এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।