দৃষ্টি সংযত রাখার গুরুত্ব

চোখের নিষিদ্ধ ব্যবহার ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতির কারণ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা আর কুপ্রবৃত্তি কামনা ও লালসা সৃষ্টি করে এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)

‘কথা বলাকে জিনা বলার কারণ এই যে দুটিই প্রকৃত জিনার ভূমিকা—জিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক।

জিহ্বা হচ্ছে বাণীবাহক। আর যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার—সত্য প্রমাণকারী।’ (মাআলিমুস সুনান : ৩/২২৩)
এ জন্যই কোরআন ও হাদিসে দৃষ্টি নত করে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একদা নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো : পরস্ত্রীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার কী বিধান? তিনি বলেন, তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৮)
দৃষ্টি হেফাজতের ফলে মহা বিজয়

চোখের সঠিক ব্যবহারের সুফল মেলে দুনিয়াতেই। আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) একবার সাহাবিদের নিয়ে অমুসলিমদের দুর্গে হামলা করলেন। দুর্গ অবরোধ করে রাখলেন। অবরোধ দীর্ঘ হয়ে গেল।

বিজয় হচ্ছিল না। যখন অমুসলিমরা দেখল, মুসলমানরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে দুর্গ অবরোধ করে রেখেছে তখন তারা একটি ষড়যন্ত্র করল যে, আমরা মুসলমানদের বলব—আমরা দুর্গের দরজা তোমাদের জন্য খুলে দিচ্ছি। তোমরা শহরে প্রবেশ করো। ষড়যন্ত্র হলো, শহরের দরজা যেদিক দিয়ে খুলছিল, সেদিকে লম্বা বাজার ছিল, যার দুই পাশে দোকান ছিল। সেই বাজার শাহি মহলে গিয়ে শেষ হয়েছিল।

তারা বাজারের দুই পাশে সুন্দরী নারীদের সাজিয়ে প্রতিটি দোকানে একজন একজন বসিয়ে দিল। তাদের বলে দিল, যদি মুজাহিদরা তোমাদের সঙ্গে কোনো কিছু করতে চায় তাহলে তোমরা অস্বীকৃতি জানাবে না। যেহেতু তাঁরা কয়েক মাস ধরে নিজ বাড়ি থেকে দূরে। ভেতরে প্রবেশের পর হঠাৎ যখন সুদর্শন এবং সুসজ্জিত নারী দেখবে, তখন তাঁরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আর আমরা পেছন দিক থেকে আক্রমণ করব।

তাঁদের যখন এ প্রস্তাব দেওয়া হলো, তখন আবু উদায়বা ইবনে জাররাহ (রা.) ভাবলেন, এতক্ষণ পর্যন্ত এ লোকগুলো মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ছিল। দরজা খুলছিল না। এখন হঠাৎ কী হলো যে তারা দরজা খোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল এবং সৈন্যদের প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দিল! এতে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।

সুতরাং তিনি সৈন্যবাহিনীকে একত্র করে বয়ান দিলেন। বললেন, মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা। তারা হাতিয়ার নামিয়ে ফেলেছে। আমাদের প্রবেশের জন্য আহবান জানাচ্ছে। আপনারা অবশ্যই প্রবেশ করবেন। কিন্তু আমি আপনাদের সামনে কোরআনে কারিমের একটি আয়াত তিলাওয়াত করছি। আপনারা এ আয়াত পড়তে পড়তে এবং এর ওপর আমল করতে করতে প্রবেশ করবেন। সে সময় তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘কুল লিল-মুমিনা ইয়াগুদ্দু মিন আবছারিহিম ওয়া ইয়াহফাজু ফুজুরাহুম, জালিকা আজকা লাহুম’ অর্থাৎ মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০)

সুতরাং তাঁরা দুর্গে এভাবে প্রবেশ করলেন যে তাঁদের দৃষ্টি ছিল নিচু। তাঁরা পুরো বাজার অতিক্রম করলেন। শাহি মহল পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। কেউ ডানে-বাঁয়ে চোখ উঠিয়ে দেখলেন না যে কী ফিতনা ওই দোকানগুলোতে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে। শুধু তাঁদের এ দৃশ্য দেখে অগণিত শহরবাসী মুসলমান হয়ে গেলেন, সুবহানাল্লাহ! (ইসলাহি খুতুবাত : ১৫/৯৮)