নওগাঁর রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট থেকে প্রতিবছর কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে সেই হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা। বছরের পর বছর বরাদ্দকৃত নির্ধারিত অর্থের সঠিক ব্যবহার না করায় আবাদপুকুর হাটের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ফলে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের মধ্যে কেনা-বেচা করতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। দ্রুত এই জনগুরুত্বপূর্ণ ধান ও পশুর হাটটিকে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে জানা গেছে যে, রাণীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম ধান ও পশুর হাট হচ্ছে আবাদপুকুর হাট। সেই হাটে মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রেতাদের জন্য কয়েকটি শেড নির্মাণ করে দেওয়া হলেও বর্তমানে এই হাটের মাছ ও মাংশ পট্টির শেডগুলোর টিন মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে। কোনটির টিন ঝড়ে উড়ে গেছে।

হাট-বাজারে ঢুকলেই ক্রেতা-বিক্রেতার ভোগান্তির শেষ থাকে না। হাটের শেডগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। কোথাও টিনের চালা ভেঙে পড়ে আছে, আবার কোথাও টিনের চালা নেই। ব্যবসায়ীরা পলিথিন টাঙিয়ে ব্যবসা করছে। বর্তমানে হাটের শেডগুলোর জরাজীর্ন অবস্থার কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ভিজে আর শুষ্ক মৌসুমে রোদে পুড়ে কেনা-বেছা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার হাটবার।

সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় বসে বাজার। এছাড়াও হাটে একটি ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগার না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় আগতদের। হাটে চলাচলের জন্য রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। অথচ গত ২০২২সালে এই হাটটির ইজারা মূল্য ছিলো ৮২লাখ টাকা, যা ভ্যাট ও অন্যান্য খাত মিলে সরকার এই হাট থেকে সরকার রাজস্ব হিসেবে কোটি টাকা আয় করে আসছে।

সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিবছর সরকারি ইজারা মূল্যের শতকরা ১৫শতাংশ অর্থ হাটের সংস্কার, মেরামত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে ব্যয় করার নিয়ম। হাটের সার্বিক অবকাঠামোগত কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক ভাবে লাগানোর দাবী সংশ্লিষ্টদের।

মাংস ব্যবসায়ী রশিদুল শেখ বলেন, বংশগতভাবে হাটে মাংসের ব্যবসা কনে আসছি। এখানে সাতজন মাংস ব্যবসায়ী আছে। বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলে মাংস ভিজে যায়। অথচ আমরা ঠিকমতো হাটের টোল দিয়ে থাকি। তার মতে হাটে আসা মুরগী ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেন।

হাট ইজারাদার হেলাল উদ্দিন হেলু মেম্বার বলেন, বর্তমানে হাটের শেডগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। কোথাও টিনের চালা ভেঙে পড়ে আছে, আবার কোথাও টিনের চালা নেই। ব্যবসায়ীরা পলিথিন টাঙিয়ে ব্যবসা করছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট বিগত কয়েক বছরের হাটের ইজারা থেকে বরাদ্দকৃত যে পরিমাণ অর্থ জমে আছে সেই অর্থাদিয়েও হাটের আধুনিকায়নের কাজ করা সম্ভব। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইচ্ছে করলেই হাটের এমন বেহাল দশা থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে পারেন।

উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন জানান, গতবছর তৎকালীন ইউএনও শাহাদাত হুসেইন স্যারের নির্দেশক্রমে উপজেলার সকল হাট ও বাজারের আধুনিকায়নের কাজের জরিপ সম্পন্ন করে জমা দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি বদলী হওয়ার কারণে পরবর্তিতে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই বাবদ অর্থ ইউএনও স্যারের নিজস্ব এ্যাকাউন্টে জমা থাকে এবং সেই অর্থ খরচের বিষয়ে একমাত্র তিনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তাই এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।