নওগাঁয় যৌতুক চেয়ে গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন – শশুর শাশুরী গ্রেফতার

মান্দায় যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় ববিতা বানু নামে এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার গগণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার (ভাইরাল) পরই বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ববিতা বানু বর্তমানে
নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ববিতা বানু, সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের জালম গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। তার স্বামীর নাম জাহিদ আলী, সে মান্দা উপজেলার গগণপুর এলাকার সমির উদ্দীন মোল্লার ছেলে।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্বামী জাহিদ আলী স্ত্রী ববিতা বানুকে মাটিতে ফেলে চুল মুঠি ধরে পেটের মধ্যে জোরে জোরে লাথি মারছে। ভিডিও শেষে দেখা যায়,
স্থানীয়রা অনেক কষ্টে জাহিদ আলীকে আটকায়। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ওই রাতেই তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।

ববিতার পরিবার জানায়, প্রায় ৭ মাস আগে জাহিদ আলীর সঙ্গে ববিতা বানুর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নির্ধারণ করা
হয়। কিন্তু ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। বিয়ের তিন মাস পর আবারও যৌতুকের দাবিতে ববিতা বানুকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় জাহিদ আলী। ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে মেয়েকে পুনরায় স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার। এরপরও বিভিন্ন সময় ওই গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায়
শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন।

এ বিষয়ে ববিতা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু আমার পরিবার গরীব হওয়ায় দাবি
করা যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারে না। এর ফলে অধিকাংশ সময় তাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমার পরিবার ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে শুক্রবার বিকেলে আরও টাকা দাবি করে স্বামী আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।’

ববিতা আরও বলেন, ‘থানা পুলিশকে জানাইনি। আর আমার পরিবারকেও বলেছি আপাতত যেন থানায় অভিযোগ বা মামলা না করা হয়। কারণ তাতে তাকে (স্বামী) জেলে যেতে হতে পারে। আমি শান্তি চাই। জাহিদের সঙ্গেই ঘর করতে চাই। সবাই মিলে
শালিশের মাধ্যমে বিষয়টা সুরাহা করা হোক। তবে সবার সামনে যে আমাকে এত মেরেছে সেই ভুল যেন সে স্বীকার করে। আমি মেয়ে, আমার বাবা গরীব। আমি তো স্বামীর ঘর ছাড়তে পারবো না।’

ববিতার মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। যৌতুকের সব টাকা দিতে না পারায় নির্যাতন করলো এভাবে আমার মেয়েটাকে। সবার সামনে মারছে
মেয়েটাকে। মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। আমার মেয়ে থানায় অভিযোগ করতে দেয়নি।
কিন্তু জাহিদের যেন শাস্তি হয়, এটা চাই। সে যে ভুল করেছে, অন্যায় করেছে, সেটা মাথা নিচু করে স্বীকার করতে হবে। এমন একটা পশুর সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে
দিয়েছি ভাবতে খারাপ লাগছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই গৃহবধূর স্বামী জাহিদ আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

চিকিৎসক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, গৃহবধূ ববিতার শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাতের দাগ আছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে আরও বেশ কয়েক দিন লাগবে।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন,নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে শনিবার রাতেই তার স্বামীকে ১ নম্বর আসামী করে ওই
পরিবারের উপর মামলা করে ,রবিবার ভোরে গৃহবধূর শাশুড়ী হাজিরা বেগম (৫৫) ও শশুর সমির উদ্দীন মোল্লাকে গ্রেফতার করে সকালে নওগাঁ কোর্টে প্রেরণ করা
হয়েছে। এদিকে প্রধান আসামী ভিকটিমের স্বামী জাহিদ আলী পলাতক আছে ,তাকে ও গ্রেফতারের জোর তৎপরতা চলছে।