নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধ, ৫ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারনুর রশিদ খানকে (৭০) তাঁর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল সোয়া ৬টার দিকে উপজেলা সদরের বাজার সড়কের বাসভবনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়া দুইটি গুলির আঘাত নিয়ে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ তার সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যš— পাঁচ ঘণ্টা সময় উপজেলার ইটাখোলা গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধস্থলে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অপরাধীদের দ্রত আইনের আওতায় আনার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভরত সমর্থকরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন।

উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা সকাল ৮টার দিকে শিবপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় শতাধিক সমর্থক ‘হারন খানের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, স্লোগান দেন। শিবপুর মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থক ইটাখোলা গোলচত্বরে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার পোড়ান ও স্লোগান দিতে থাকেন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুর্বৃত্ত্বদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা। এ সময় উভয়

প্রান্তের অন্তত ১৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে যানবাহনের তীব্র জট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহনগুলোর নারী ও শিশুসহ অন্তত কয়েক হাজার যাত্রী।
যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনিয়া জিন্নাত ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার মহাসড়ক থেকে অবরোধকারীদের উঠে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা শুনেননি। পরে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারফ খান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম অবরোধস্থলে গিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ সরিয়ে নিলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারফ খান অবরোধকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হারনুর রশিদ খান শিবপুর উপজেলার প্রবীণতম রাজনৈতিক নেতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্ত্বদের গুলি করার ঘটনা অত্যান্ত বেদনাদায়ক। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের দ্রততম সময়ে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে পুলিশ। তারা যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

এ সময় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, এরই মধ্যে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত তিনজনকেই শনাক্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম এখনই বলা যাচ্ছে না। পুলিশি অভিযান শুর হয়ে গেছে, আশা করছি তারা খুব দ্রতই গ্রেপ্তার হবেন। কী কারণে কে বা কারা এই হামলা করেছে তা বের হয়ে আসবে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, সকাল সোয়া ছয়টার দিকে তিনজন লোক হারনুর রশিদ খানের সঙ্গে দেখা করতে বাসার অতিথি কক্ষে আসেন। এসময় তাদের বসতে বলে আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে বাসার ভেতরের দিকে ফিরলে তাঁদের একজন পিস্তল বের করে হারুন অর রশিদ খানের পিঠে পরপর দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।

পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালটির চিকিৎসকেরা জররি চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।