নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধন

“সরকার ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে শিক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ৩.৫% এ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে” গত শনিবার দুই দিনের জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ ও চাহিদা মেটাতে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য যোগ্য এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি জাতীয় সেমিনারকে খুব সময়োপযোগী বলেও প্রশংসা করেন এবং আশা করেন যে এই ভার্চুয়াল সেমিনারে আলোচ্য অভিজ্ঞতাসমূহ মহামারীর মধ্যে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।

“মহামারীকালে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা: সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত ও সংকট উত্তরণের উপায়”

ড. শামসুল আলম আরও বলেন যে, এসডিজি-৪ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা আরো স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে হবে।

সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাস্পাসেস, কনরাড এডেনাউয়ার স্টিফটং (কেএএস), জার্মানি যৌথভাবে দুইদিন ব্যাপী (১৮-১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) এই ভার্চুয়াল জাতীয় সেমিনারাটি আয়োজন করেছে। সেমিনারটির উদ্দেশ্য হল মহামারীর সময়ে এসডিজি-৪ এর অভিজ্ঞতা আলোচনা করা এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, যা সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলে।
এই মহামারীতে সকলের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ প্রচার করা ও এর বাংলাদেশে এর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এই সেমিনারের্ আরেকটি উদ্দেশ্য।
এই ভার্চুয়াল জাতীয় সেমিনারে, চারটি সেশন রয়েছে। প্রথম দিনে আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে, ‘অনলাইন শিক্ষা বনাম শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা’ এবং ‘শিক্ষকদের দক্ষতা ও অবকাঠামো উন্নয়ন’। এবং দ্বিতীয় দিনের আলোচনা বিষয়বস্তু হচ্ছে, ‘শিক্ষায় বৈষম্য’ ও ‘শিক্ষায় নতুন অভিজ্ঞতা/ক্রীড়নক’।

সেমিনারের সমাপনি অনুষ্ঠানে (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) মাননীয় মন্ত্রী এম এ মান্নান, এমপি, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।

“আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা মহামারী চলাকালীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষায় ব্যাপক গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামারী দ্বারা সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জগুলি বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করা উচিত। তিনি বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা অনুসারে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনের উপরও জোর দেন এবং বলেন যে একটি ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেল’ সে ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান রাখায় মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

অধ্যাপক এম. ইসমাইল হোসেন, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বাংলাদেশে নিম্নমানের শিক্ষার দুষ্টচক্র ভেঙে, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের অদক্ষতার দিকেও ইঙ্গিত করেন এবং এর যথাযথ ব্যবহারের জন্য সকলের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।

“এসডিজি-২০৩০ এর লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন বিশ্ব ও বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন জনাব ক্রিশ্চিয়ান এসলে, পরিচালক, রিজিওনাল প্রোগ্রাম পলিটিক্যাল ডায়ালগ এশিয়া অফ কনরাড এডেনাউয়ার স্টিফটং (কেএএস)।

এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক তৌফিক এম. হকের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিনি বলেন যে কেবল স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া মহামারীর কারণে শিক্ষা খাতের ক্ষতি কমাতে যথেষ্ট হবে না।

উদ্বোধনী অধিবেশন এসআইপিজির সম্মানিত অনুষদ সদস্য ড. এম মাহফুজুল হকের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয়।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কলেজ প্রশাসক, স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।