নাইকোর কাজ পেতে অর্থের লেনদেন সাক্ষ্য দেন কানাডার রয়েল পুলিশ

কানাডার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকোর কাজ পেতে ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়ার মধ্যে অর্থ লেনদেন হয়েছে।সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এসব কথা বলেন কানাডিয়ান রয়েল পুলিশের সদস্য লয়েড শোয়েপ।

তিনি আরও বলেন, কানাডার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকোতে তৎকালীন সরকারের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করতে ইন্ধন জোগায়। আমরা এ দুর্নীতির বিষয়ে জানতে পারি গণমাধ্যমের নিউজ দেখে। নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে নাইকো রিসোর্সেস কানাডায় দুর্নীতির দায়ে সাজপ্রাপ্তও হয়েছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জ অস্থায়ী আদালতে যান কানাডার রয়েল পুলিশের দুই সদস্য কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপ। পরে সাড়ে ১১টায় লয়েড শোয়েপের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান তার সাক্ষ্য নেন। এরপরে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

গত ২৮ অক্টোবর রাতে আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় আসেন তারা। রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন কানাডিয়ান রয়েল পুলিশের ওই দুই সদস্য। এর আগে ১৯ অক্টোবর তাদের সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করেন ঢাকার বিশেষ আদালত।

কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সৃষ্টি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদক খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর ২০০৮ সালের মে মাসে খালেদা জিয়াসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ১৯ মার্চ এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। এর পর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

বাকিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে সরকারে থাকাকালে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কানাডার কোম্পানিটিকে অবৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুবিধা পাইয়ে দেয়। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।